পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bo বিভূতি-রচনাবলী শীতের বৈকাল। বিস্তীর্ণ প্রাস্তরে ঘন ছায়া নামিয়াছে, দূরে বনশ্রেণীর মাথায় মাথায় অল্প অল্প কুয়াশা জমিয়াছে। রেল-লাইনের দু-ধারে মটর-ক্ষেত, শীতল সান্ধ্য-বাতাসে তাজ মটরশাকের স্নিগ্ধ সুগন্ধে কেমন মনে হইল যে-জীবন আরম্ভ করিতে যাইতেছি তাহা বড় নির্জন হইবে, এই শীতের সন্ধ্যা যেমন নির্জন, যেমন নির্জন এই উদাস প্রান্তর আর ওই দুরের নীলবর্ণ বনশ্রেণী, তেমনি । গরুর গাড়ীতে প্রায় পনের-ষোল ক্রোশ চলিলাম সারারাত্রি ধরিয়া-ছইয়ের মধ্যে কলিকাতা হইতে আনীত কম্বল র্যাগ ইত্যাদি শীতে জল হইয়া গেল—কে জানিত এ-সব অঞ্চলে এত ভয়ানক শীত ! সকালে রৌদ্র যখন উঠিয়াছে, তখনও পথ চলিতেছি । দেখিলাম, জমির প্রকৃতি বদলাইয়া গিয়াছে—প্রাকৃতিক দৃশু ও অন্ত মুক্তি পরিগ্রহ করিয়াছে—ক্ষেতখামার নাই, বস্তি লোকালয়ও বড়-একটা দেখা যায় না—কেবল ছোটবড় বন, কোথাও বন, কোথাও পাতলা, মাঝে মাঝে মুক্ত প্রান্তর, কিন্তু তাহাতে ফসলের আবাদ নাই । কাছারিতে পৌছিলাম বেলা দশটার সময় । জঙ্গলের মধ্যে প্রায় দশ-পনের বিঘা জমি পরিষ্কার করিয়া কতকগুলি খড়ের ঘর, জঙ্গলেরই কাঠ, বাশ ও খড় দিয়া তৈরী—ঘরে শুকনে ঘাস ও বন-ঝাউয়ের সরু গুড়ির বেড়া, তাহার উপর মাটি দিয়া লেপা । ঘরগুলি নতুন তৈরী, ঘরের মধ্যে ঢুকিয়াই টাটকা-কাটা খড, আধকাচা ঘাস ও বাশের গন্ধ পাওয়া গেল । জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম, আগে জঙ্গলের ওদিকে কোথায় কাছারি ছিল, কিন্তু শীতকালে সেখানে জলাভাব হওয়ায় এই ঘর নতুন বাধা হইয়াছে, কারণ পাশেই একটা ঝরণা থাকায় এখানে জলের কষ্ট নাই । ○ জীবনের বেশীর ভাগ সময় কলিকাতায় কাটাইয়াছি। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গ, লাইব্রেরী, থিয়েটার সিনেমা, গানের অডিড-এ-সব ভিন্ন জীবন কল্পনা করিতে পারি না—এ অবস্থায় চাকুরীর কয়েকটি টাকার খাতিরে যেখানে আসিয়া পড়িলাম, এত নির্জন স্থানের কল্পনাও কোনদিন করি নাই।) দিনের পর দিন যায়, পূৰ্ব্বকাশে হুর্যের উদয় দেখি দূরের পাহাড় ও জঙ্গলের মাথায়, আবার সন্ধ্যায় সমগ্র বনঝাউ ও দীর্ঘ ঘাসের বনশীর্ষ সি দুরের রঙে রঙিাইয়া স্বৰ্য্যকে ভূবিয়া যাইতে দেখি—ইহার মধ্যে শীতকালের যে এগার-ঘণ্টা ব্যাপী দিন, তা যেন খা-খা করে শূন্ত, কি করিয়া তাহ পুবাইব, প্রথম প্রথম সেইটা আমার পক্ষে হইল মহাসমস্ত । কাজকৰ্ম্ম করিলে অনেক করা যায় বটে, কিন্তু আমি নিতান্ত নব আগন্তুক, এখনও ভাল করিয়া এখানকার লোকের ভাষা বুঝিতে পারি না, কাজের কোন বিলিব্যবস্থাও করিতে পারি না, নিজের ঘরে বসিয়া বসিয়া, যে কয়খনি বই সঙ্গে আনিয়ছিলাম তাহা পড়িয়াই কোন রকমে দিন কাটাই। কাছারিতে লোকজন যার আছে তারা নিতান্ত বৰ্ব্বর, না বোঝে তাহারা আমার কথা, না আমি ভাল বুঝি তাহদের কথা। প্রথম দিন-দশেক কি কষ্টে যে