পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু ৩৬৭ করি, একটা ব্যবসা খুলব, টাকা যোগাড় করি কোথা ? সত্যনারায়ণের শিল্পি দেওয়াও ভুলিয়া গেল। মাল খানেক কাটিয়া গিয়াছে । অন্ত কোনো দিক হইতেই হাঙ্গামা বাধে নাই বটে, কিন্তু হরিপদ বড় বিপদে পড়িয়াছে, এই এক মাস তাহার মনের দিক হইতে একটা বড় গোলমাল বাধিয়া গিয়াছে। এই টাকাটা লইয়া সে কি ভালো করিল ! আপিসের তাহারা এতদিন তাহাদের ভুল নিশ্চয়ই জানিয়া ফেলিয়াছে। তাহার খোজও করিয়াছে। কিন্তু কোথায় পাইবে তাহার পাত্তা। সেই কেরানী বাবুর উপরে নিশ্চয়ই সব দায়িত্ব পড়িয়াছে এবং এতদিন বেচারীর চাকরি আছে কিনা সন্দেহ । যতই দিন যাইতে লাগিল, হরিপদ ততই মনে অস্বস্তিবোধ করিতে লাগিল । যতদিন পুলিশের ভয় ছিল, বা আপিস হইতে তাহার টাকা কাড়িয়া লইবার ভয় ছিল, ততদিন তাহার মনে এ কথা ওঠে নাই যে, এ টাকা লওয়া অন্যায় বা পাপ। কিন্তু এ সম্বন্ধে যতই সে নিজেকে নিরঙ্কুশ বোধ করিতে লাগিল, ততই মনে হইতে লাগিল এ টাকায় তাহার কোনো অধিকার নাই, এ অপরের টাকা সে চুরি করিয়া আনিয়াছে। ছ'মাস কাটিয়া গেল ; কখনো লে ভাবে, টাকাটা ফিরাইয়া দিব ; আবার পরদিনই মনে হয় এই এগারোশে টাকায় একখানি মুনীর দোকান খুলিয়া গ্রামে বসিয়াই সে চমৎকার চালাইতে পারে। ভগবান তাহদের দুঃখ দেখিয়া মূলধন যোগাড় করিয়া দিয়াছেন। থাক, টাকাটা । টাকা ফেরত দেওয়ার একটা প্রধান বাধা দাড়াইয়াছে হরিপদর স্ত্রী । সে যেদিন হইতে শুনিয়াছে স্বামী টাকা ফেরত দেওয়ার সংকল্প করিতেছে, সেদিন হইতে সে কাদিয়া-কাটিয়া অনর্থ বাধাইয়াছে। গরীবের স্বরের মেয়ে, গরীবের ঘরের বেী—তার কাছে এগারোশো টাকা একটা খুব বড় ব্যাপার। হরিপদ তাহাকে বুঝাইয়া বলিল—স্ক,খো, ফকির টাকা তো বটে। এতদিন কথাটা ভালো করে বুঝিনি, আজকাল রাত্রে আমার ঘুম হয় না ভেবে ভেবে তা জানো ? কাজ নেই বাপু, এগারোশো টাকা ক'দিন খাব ? ওটা তাদের দিয়েই আসি। আশালত বলিল—ফকির টাকা হ'ল কি ক’রে ? ভগবান না দিলে তাদেরই বা ভুল হবে কেন ? ও যখন ঘরে এসেচে, তখন দীতের লক্ষ্মী পারে ঠেলে না, আমার কথা শোনে, ও নিয়ে ভেবে মিথ্যে মাথা খারাপ কোরো না লক্ষ্মীটি। ও তো তুমি কোন একটা লোককে ফাকি দিয়ে নিয়ে আসোনি, তারা ভুল করে দিয়েচে, এতে তোমার দোষ কি ? কারো একজনের টাকা নয়, কোম্পানীর টাকা, বড় লোক কোম্পানী, তাদের কাছে এগারোশো টাকা কিছুই নয়, কিন্তু আমাদের কাছে অনেক বেশি। সারা জীবনের একটা হিল্পে হয়ে যাবে। আমি কি আমার নিজের জন্যই বলি, নিজের চেহারাটা একবার আয়নার দেখে দিকি ? বন-জঙ্গলে ঘুরে গাছপালা খুঁজে খুঁজে কি ছিরি বেরিয়েচে ! ওই টাকায় একখানা দোকান করে, বলে চলবে।