পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু ○*ぶ。 ও যে এমন কথা বলবে তা বুঝতে পারি নি। কথা শুনে তো অবাক হয়ে গেলাম। বললাম, সব পারব কিন্তু মানুষ খুন করা আমার দিয়ে হবে না। আর তুমিই বা আমার জন্তে । মরবে কেন ? পাগলী রেগে বললে—তবে এখানে মরতে এসেছিলি কেন মুখপোড়া, বেরো, দূর হ— আরও নানা রকম অশ্লীল গালাগাল দিলে। ওর মুখে কিছু বাধে না, মুখ বড় খারাপ। আমি আজকাল ওগুলো আর তত গায়ে মাখি নে, গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। বললাম— রাগ করছ কেন ? একটা মানুষকে খুন করা কি মুখের কথা ? আমি না ভদ্রলোকের ছেলে ? - পাগলী আবার মুখ বিকৃত ক'রে বললে—ভদর লোকের ছেলে। ভদর লোকের ছেলে তবে এ পথে এসেছিস্ কেন রে, ও অলপ্লেয়ে ঘাটের মড়া ? তন্ত্ৰ-মন্ত্রের সাধন ভদর লোকের ছেলের কাজ নয়—যা গিয়ে কামিজ চাদর পরে হোসে চাকরি করু গিয়ে—বেরো— বললাম—তুমি শুধু রাগই কর। পুলিসের হাঙ্গামার কথাটা তো ভাবছ না। আমি যখন ফাসি যব, তখন ঠেকাবে কে ? মনে মনে আবার সন্দেহ হ’ল, না এ নিতান্তই পাগল, বদ্ধ উন্মাদ । এর কাছে এসে শুধু এতদিন সময় নষ্ট করেছি ছাড়া আর কিছু না । তখনই মনে পড়ল পাগলীর মুখে শুদ্ধ সংস্কৃত শ্লোক শুনেছি, তন্ত্রের কথা শুনেছি। সময়ে সময়ে সত্যই এমন কথা বলে যে, ওকে বিদুষী ব’লে সন্দেহ হয়। সেইদিন থেকে পাগলী আমার ওপর প্রসন্ন হ’ল । বিকেলে যখন গেলাম, তখন আপনিই ডেকে বললে—আমার রাগ হ'লে আর জ্ঞান থাকে না, তোকে ওবেলা গালাগাল দিয়েছি, কিছু মনে করি নে। ভালোই হয়েছে, তুই সাধন করতে চাস নি। ও সব নিম্ন-তন্ত্রের সাধনা। ওতে মানুষের কতকগুলো শক্তি লাভ হয়। তা ছাড়া আর কিছু হয় না । বললাম—কি ভাবে শক্তি লাভ হয় ? পাগলী বললে—পৃথিবীতে নানা রকম জীব আছে তাদের চোখে দেখতে পাওয়া যায় না। মানুষ মরে দেহশূন্ত হ’লে চোখে দেখা যায় না, আমরা তাদের বলি ভূত। এ ছাড়া আরও অনেক রকম প্রাণী আছে, তাদের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে কম, কিন্তু শক্তি বেশি। এদেরও দেখা যায় না। তন্ত্রে এদের ডাকিনী, শাখিনী এই সব নাম। এরা কখনও মানুষ ছিল না, মানুষ ম'রে যেখানে যায়, এরা সেখানকার প্রাণী । মুসলমান ফকিরেরা এদের জিন বলে। এদের মধ্যে ভালো-মন্দ দুই-ই আছে। তন্ত্রসাধনার বলে এদের বশ করা যায়। তখন যা বলা যায় এরা তাই করে। করতেই হবে, না করে . উপায় নেই। কিন্তু এদের নিয়ে খেলা করার বিপদ আছে। অসাবধান তুমি যদি হয়েছ, তোমাকে মেরে ফেলতে পারে। অবাক হয়ে ওর কথা শুনছিলাম। এসব কথা আর কখনও শুনি নি। এর মতো পাগলের মুখেই একথা সাজে। আর যেখানে বসে শুনছি, তার পারিপার্থিক অবস্থাও এই