পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাহোর রাজত্ব করিতেন। সেই সময় হইতে প্রায় তিন শতাব্দ কাল এখানকার হিন্দুরাজগণ মুসলমান আক্রমণ হইতে পঞ্চনদ প্রদেশ রক্ষা করিয়া আসিতেছিলেন । খৃষ্টীয় ১০ম শতাদের শেষভাগে গজনীপতি সুলতান সবক্তগীন প্রবল বস্তার স্তায় স্বীয় বিপুল মুসলমানবাহিনী লইয়া হিন্দুস্থানবিজয়ে অগ্রসর হন। লাহোররাজ l জয়পাল মুসলমানসেনার হস্তে পরাজিত হইয়া হতাশহীদয়ে অগ্নিকুওে প্রাণ বিসর্জন করেন। ইহার কিছুকাল পরে গজনীরাজ সুলতান মাস্ক, ভারতলুণ্ঠনে আসিয়া পেশাবর সন্নিকটে জয় পালের পুত্ৰ অনঙ্গপালকে পরাস্ত করিয়া সদলে অগ্রসর হন এবং পঞ্চনদের সমীপস্থ অন্তান্ত প্রদেশ জয় ও লুণ্ঠন করিয়া বহু ধনরত্ন সঞ্চয়পূৰ্ব্বক স্বরাজ্যে প্রত্যাবৃত্ত হন। অনঙ্গপালকে জয় করিবার ত্ৰয়োদশবর্ষ পরে তিনি পুনরায় ভারতে আসিয়া লাহোর অধিকার করেন। তদবধি ঐ স্থান কোন না কোন মুসলমান-রাজবংশেরই অধিকারে থাকে। শিধজাতির অভু্যদয়ে এখানকার মুসলমানরাজবংশ হীনপ্রভ হয় এবং শিখসর্দারগণ এই স্থানে আধিপত্য বিস্তার করিয়া ক্রমান্বয়ে রাজ্যশাসন করিতে থাকেন। পাব: কেশ্বরী মহারাজ রণজিৎ সিংহের সময় লাহোর রাজধানী শিথগৌরবের পরাকাষ্ঠী প্রদর্শন করিয়াছিল। - সবক্তগীন, মাহ্মদ, জয়পাল ও অনঙ্গপাল দেখ। ] সুলতান মাহ্মদের অধস্তন আটজন গজনীরাজের রাজত্ব কালে লাহোরনগর মুসলমান রাজ-প্রতিনিধির দ্বারা শাসিত হইয়াছিল। ১.০২ খৃষ্টাব্দে সেলজুক-( তা তার গণ গজনীর সুলতানকে পরাজয় করিয়া তাহার সিংহাসন তাধিকার করিলে, তিনি ভারতে পলাইয়া আইসেন। তদবধি মহম্মদ ঘোরীর ভারতবিজয় পৰ্য্যস্ত লাহোর নগর উক্ত রাজবংশের এবং ভারতীয় মুসলমান-সাম্রাজ্যের রাজধানীরূপে পরিগণিত হইতে থাকে। মহম্মদ ঘোর ১১৯৩ খৃষ্টাব্দে দিল্লী অধিকারপূর্বক তথার রাজপাট ও রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। খিলজী ও তুগলকবংশীয় পাঠান রাজগণের রাজত্বকালে লাহোর নগরের উল্লেখযোগ্য কোন , পরিবর্তন সাধিত হয় নাই । ১৩৯৭ খৃষ্টাব্দে মোগল সর্দার তৈমুর ভারত আক্রমণ করেন, তাহার একজন সেনাপতি স্বয়ং এই নগর লুণ্ঠন করেন। তৎকালে লাহোর সম্পূর্ণরূপে শ্ৰীহীন হইয়া পড়িয়াছিল। ১৪৩৬ খৃষ্টাব্দে বহলোল লোদী ভারত-সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হইয়া লাহোর আক্রমণ ও অধিকার করেন । র্তাহার পৌত্র সুলতান ইব্রাহিম লোণীর রাজ্যকালে এখানকার আফগান শাসনকৰ্ত্তা রাজদ্রোহী হইয় মোগল-সম্রাটু বাবর শাহকে ভারতীক্রমণে আমন্ত্ৰণ করিলে, বাবর ১৫২৪ খৃষ্টাব্দে লাহোরপ্রাস্তে জাসিয়া উপনীত হন। লাহোরের নিকটে ইব্রাহিমের সেনাদলের সহিত বাবরের যুদ্ধ XVII も○ [ ২৪৯ ] লাহোর হয়। বাপর ইব্রাহিমকে পরাস্ত করিয়া লাহোরনগর লুণ্ঠন করিয়াছিলেন । ১৫২৬ খৃষ্টাব্দে বাবর পুনরায় ভারত আক্রমণ করেম। পাণিপথের প্রসিদ্ধ যুদ্ধে পাঠানরাজকে পরাস্ত করিয়া তিনি নীি অধিকারপূর্বক ভারতে মোগল-সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। ভারত সাম্রাজ্যে এই রাজবংশের প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত হইবার সঙ্গে সঙ্গেই লাহোর নগরের শ্ৰীবৃদ্ধি সাধিত হয় । মোগলসম্রাট গণের রাজপ্রাসাদ এবং রাজপুঙ্গবগণের নানা শিল্পসমন্বিত অট্টালিকা ও সমাধিমন্দির প্রভৃতি অস্থাপি মোগলকীৰ্ত্তির গৌরব জ্ঞাপন করিতেছে। [ লাহোর নগর দেখ। ] ১৭৩৮ থষ্টাব্দে পারস্তপতি নাদির শাহ অপ্রতিহত গতিতে এই জনপদের মধ্য দিয়া ভারতে আগমনপূৰ্ব্বক মোগলরাজশক্তিকে পদদলিত করিয়াছিলেন। র্তাহার অকস্মাৎ আক্রমণ ও বিজয়লাভ সমর্শন করিয়া বলবীৰ্য্যসম্পন্ন শিখঞ্জাতি আপনাদের হৃদয়ে অভু্যখানের এক অভিনব আশ সঞ্চারিত করিতে লাগিল । গুরু নানকের ধৰ্ম্মমত পূৰ্ব্বেই তাহদের হৃদয় দৃঢ়মূল হইয় সমগ্র পঞ্জাবে ধীরে ধীরে একটা জাতীয় শক্তি বিস্তার করিয়াছিল। শিখগণ সেই ধৰ্ম্মমস্ত্রের অমুবলে ক্রমশ: একতাবদ্ধ ও বলদৃপ্ত হইয়া বৈদেশিকের পদাঘাত অসহ জ্ঞান করেন এবং সাগ্রহে সকলে বৈদেশিক রাজার অধীনতাপাশ উচ্ছেদের প্রয়াস পান । তাহারা প্রথমে দস্থ্যর স্তর দলবদ্ধ হইয়া ইতস্ততঃ লুণ্ঠন দ্বারা ধনরত্ন সঞ্চয়পূৰ্ব্বক পঞ্জাবের এক একটা প্রদেশে সর্দাররূপে শাসন বিস্তার করেন। পরে তাহারা পরস্প রে সন্মিলিত হইয়া দুই বা তিনটী মিশলে এক একটা শক্তিপুঞ্জ সংগঠনপূৰ্ব্বক প্রবল শত্রর আক্রমণ হইতে স্বদেশ রক্ষা করিতে অগ্রসর হইয়াছিলেন। ( পঞ্জাব ও শিখ দেখ। ] ১৭৪৮ খৃষ্টাব্দে দুরাণী সর্দার আক্ষদশাহ আবদালী লাহোর আক্রমণ করেন। এই সময়ে মুসলমান শত্ৰগণের উপযু পরি আক্রমণ ও লুণ্ঠনে লাহোরনগর ও তাহার চতুষ্পাশ্ববৰ্ত্তী স্থান উৎসন্ন যায় এবং জনশূন্ত হইয়া পড়ে ; শিখগণ এই সময়ে যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন করিয়াছিলেন । ১৭৬৭ খৃষ্টাব্দে আহ্মদ শাহ শেষবার ভারত লুণ্ঠন ও বিজয় করিয়া স্বদেশে প্রত্যাগমন করেন। তাহার পর প্রায় ৩০ বৎসর কাল লাহোর নগরে আর কোনরূপ অত্যাচার ও অবিচার ঘটে নাই এবং উদ্ধত শিখসম্প্রদায় এই সময়ে কোনরূপ যুদ্ধবিগ্রহে ক্লিষ্ট না হইয়া বরং ক্রমশঃ বলপুষ্ট হইতেছিল। সমগ্র লাহোর জেলায় তৎকালে ভঙ্গী মিশলের তিন জন সর্দার আপন আপন প্রভাব বিস্তার করিয়াছিলেন । ১৭৯৯ খৃষ্টাব্দে শিখসর্দার রণজিৎসিংহ আফগান-আক্রমণকারী জমান শাহের নিকট হইতে লাহোঁর সম্পত্তি লাভ করিয়া