পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদেশ (তান্ত্রিক প্রভাব ) [ 8x२ ] বঙ্গদেশ (তান্ত্রিক প্রভাব ) অধিকারভুক্ত হইয়াছিল। ঐ সময়ে বঙ্গদেশে সমতট ও ডবাক রাজ্য গঠিত হইয়াছিল। বঙ্গদেশের বিভিন্ন ভূভাগ শাসন করিবার জন্ত সমুদ্রগুপ্ত র্তাহার আত্মীয় স্বজনকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তাহারা অৰ্দ্ধস্বাধীন সামন্তরূপে পাটলিপুত্রধিষ্ঠিত গুপ্তসম্রাট্রগণের পরামর্শে অনেক সময় বঙ্গরাজ্য শাসন করিতেন । তাহাদের যত্নে বঙ্গদেশে নানা বৈদিক মিশ্রিত পৌরাণিক ধৰ্ম্মমত প্রচারিত হইতে থাকে। খৃষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দী হইতে ৭ম শতাব্দী পৰ্য্যস্ত বঙ্গের নানাস্থালে গুপ্তরাজগণ প্রবল ছিলেন এবং তঁাহীদের অধীনে কায়স্থসামন্তগণ বঙ্গশাসন করিতেছিলেন । কর্ণসুবর্ণে প্রধানত: গুপ্তরাজগণের রাজধানী ছিল। পূৰ্ব্বেই দেখাইয়াছি, অতি পূৰ্ব্বকাল হইতেই বঙ্গদেশে জৈন ও বৌদ্ধধৰ্ম্ম সাধারণের হৃদয় অধিকার করিয়াছিল। মধ্যে শুঙ্গ ও কাশ্ববংশের যত্নে ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম প্রচারিত হইলেও তাহ সাধারণের রুচিসঙ্গত হয় নাই। মহারাজ কনিষ্কের সময় ক্রিয়াকাণ্ডবস্থল ও বহু দেবদেবীপূজামূলক মহাযান মত প্রচারিত হয়, তাহাই জন সাধারণের মনোমত হইয়াছিল । সুতরাং গুপ্তরাজগণের ব্রাহ্মণ্য-ধৰ্ম্মপ্রচারে যত্ন ও আগ্রহ থাকিলেও খুষ্টীয় ৫ম শতাব্দ পর্যন্ত গৌড়বঙ্গে বৌদ্ধ ও হিন্দুগণের সমান প্রভাব ছিল । ব্রাহ্মণভক্ত গুপ্তরাজগণ হিন্দুশাস্ত্রানুসারে সাধারণের মতিগতি ফিরাইবার জন্য চেষ্টা করিলেও তিনি বৌদ্ধশ্রমণ বা শ্রাবকের প্রতি বিদ্বেষভাব দেখাইতে সাহসী হন নাই । মহাযান মতের রূপান্তর তান্ত্রিক বৌদ্ধধৰ্ম্ম-জন-সাধারণের মধ্যে বিশেষ সমাদৃত হওয়ার গুপ্ত ৰূপালগণ নিষ্ঠাবান শৈব অথবা বৈষ্ণব হইলেও সাধারণের মনোরঞ্জনের জন্ত তান্ত্রিক বৌদ্ধ দেবদেবীর পূজায় উৎসাহ দান করিতেন। এমন কি, কোন কোন গুপ্তরাজ গোড়া তান্ত্ৰিক হইয় পড়িয়াছিলেন । এই সকল গুপ্তরাজগণের মুদ্রার তান্ত্রিক দেবদেবীর মূৰ্ত্তি উৎকীর্ণ দেখা যায়। বলিতে কি, খৃষ্টীয় ৫ম শতাব্দীতে গুপ্তরাজগণের আধিপত্য কালেই গৌড়বঙ্গে তাঞ্জিক ধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল । তাছাদের উৎসাহেই গৌড়ীয় তান্ত্রিকগণের নিকট হিন্দু ও বৌদ্ধধৰ্ম্মের সমন্বয় সাধিত হইয়াছিল। তান্ত্রিকগণের প্রভাবে বৈদিকতা এক প্রকার বিলুপ্ত হইয়াছিল। এখানকার তান্ত্রিক প্রভাব কেবল গৌড় ও বঙ্গ বলিয়া নহে, মুদুর উত্তরে কাশ্মীর ও চীনদেশে, পূৰ্ব্বে চীনসমুদ্রের উপকূলবৰ্ত্তী আনাম ও কম্বোয়ু রাজ্যে এবং দক্ষিণে যবদ্বীপ, সুমাত্রা ও সিংহলে পর্যন্ত বিস্তৃত ৪ইয়াছিল । কম্বোজ ও যবদ্বীপ হইতে নির্জন বন মধ্যে যে সকল প্রাচীন তান্ত্রিক দেবদেবীমূৰ্ত্তি ও শিলালিপি আবিষ্কৃত চষ্টয়াছে, তাহ পর্যালোচনা করিলে বুঝা যায় যে, ঐ সকল শিল্প মধ্যে গৌড়-বঙ্গের বৈষ্ণব, শৈব অথবা শাক্ত স্মৃতির অভাব নাই। উক্ত দেবদেবীর উপাসকগণের মূৰ্ত্তিতে গৌড়ীয় বা বদীয় আদর্শ রহিয়াছে । বর্তমান বীরজাতির জাদর্শস্থান জাপানেও সেই মুদূর অতীত কালে গৌড়-বঙ্গের তান্ত্রিক প্রভাবের স্বচনা দেখা গিয়াছিল। মহাবীর জাপগণের পূর্বপুরুষগণ খৃষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বদীয় তান্ত্রিকতায় দীক্ষিত হইয়া এবং বঙ্গীয় তাহিক আচাৰ্য্যকে গুরুত্বে বরণ করিয়া অভিনব উন্নতির পথে অগ্রসর হইয়াছিলেন। ৫২৬ খৃষ্টাব্দে আচাৰ্য্য বোধিধৰ্ম্ম তমলুক হইয়া সমুদ্র পথে কান্টনে যাত্র করেন । তথা হইতে তিনি চীনসম্রাটের সভায় আহত হইয়াছিলেন। সেই বোধিধৰ্ম্মের “কাবায়ু” ও ভিক্ষাপাত্র জাপানের ইকরুগ-মঠে বহুকাল রক্ষিত্ত ছিল । তিনি এ দেশ হইতে “প্রজ্ঞাপারমিতাঙ্কদয়সুত্র” ও “উষ্ণীষবিজয়ধারণী” নামক যে তন্ত্রগ্রন্থ লইয়া গিয়াছিলেন, বঙ্গক্ষরে লিখিত সেই গ্রন্থদ্বয় জাপানের প্রসিদ্ধ হোরিউজি’ মঠ হইতে আবিষ্কৃত হইয়াছে। আজও জাপানের সিঙ্গোন বা তান্ত্রিকগণ যে সকল স্তবকৰচাদি লিখিয়া পাঠ বা ধারণ করেন, সে সমুদায় পূর্বোঞ্চ ৰঙ্গক্ষরের আদর্শে লিখিত । গুপ্তসম্রাটুগণ সকলেই দেবব্রাহ্মণভক্ত, শৈব বা বৈষ্ণব ধৰ্ম্মাবলম্বী হইলেও তাহারা বিশেষ বৌদ্ধ বিদ্বেষী ছিলেন বলিয়া মনে হয় না। প্রায় ৪০৭ খৃষ্টাব্দে গুপ্তসম্রাট, ২য় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের সময় প্রসিদ্ধ চীনপরিব্রাজক ফা-হিয়ান গুপ্তরাজধানী পাটলিপুত্রে আগমন করেন। তিনি এখানে অশোকের অম্বরচুম্বি প্রভূত স্থাপত্যের আকর বিশাল রাঙ্গভবনের ধ্বংসাবশেষ দেখিয়া বিস্ময়বিমূঢ় হইয়াছিলেন। তিনি হীনযান ও মহাযান উভয় সম্প্রদায়ের সঙ্ঘাঃাম ও মঠ দেখিয়াছিলেন । এই সকল সন্তঘারামে প্রায় ছয় সাত শত আচাৰ্য্য অব স্থিতি করিতেন । তখনও জগতের সকল স্থান হইতে বৌদ্ধতত্ত্বমুরাগী প্রধান আচাৰ্য্যগণ এখানে আসিয়া সমবেত হইতেন । শ্রমণ ও পণ্ডিতগণ সকলেই এখানে ধৰ্ম্মোপদেশ লাভ করিবার জন্ত আগমন করিতেন। এখানে ফা-হিয়ান বুদ্ধদেবের রথযাত্রা মহোৎসব উজ্জল ভাষায় বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন। এখানে তিন বর্ষকাল থাকিয় তিনি সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করেন এবং বুদ্ধের ধৰ্ম্মোপদেশ নকল করিয়া লয়েন । পাটলিপুত্র হইত্ত্বে চম্পায় আসিয়াও তিনি বহুতর বৌদ্ধকীৰ্ত্তি দর্শন করিয়াছিলেন। তৎপরে সমুদ্রোপকূলবর্তী তাম্রলিপ্ত নগরে আসিয়াও তিনি ২৪টী সঙ্ঘারাম ও বহুতর বৌদ্ধাচাৰ্য্য সম্প্রদর্শন করেন। এখানেও চীনপরিত্রাজক দুই বর্ষকাল থাকিয়া বহুতর বৌদ্ধশ্বত্র নকল করেন ও বৌদ্ধ দেবমূৰ্ত্তি আঁকিয়া লয়েন। তিনি হিন্দুদিগকে ঘৃণার

  • Anecdota Oxoniansis, Aryan series, part iii,