পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম পরিচ্ছেদ : পদ্মপলাশলোচনে । তুমি কে ? ఏ মাঝখানে পাড়ার নিষ্কৰ্ম্মা ছেলেরা লড়াই, ঝগড়া, মারামারি করিতেছে এবং পরস্পর মাতাপিতার উদ্দেশে নানা প্রকার সুসভ্য গালাগালি করিতেছে। 益 এই তিন মহল সদর । এই তিন মহলের পশ্চাতে তিন মহল অন্দর। কাছারি বাড়ীর পশ্চাতে যে অন্দর মহল, তাহা নগেন্দ্রের নিজ ব্যবহার্য্য। তন্মধ্যে কেবল তিনি, _ਗੈਝਾੜ ভাৰ্য্যা ও র্তাহাদের নিজ পরিচর্য্যায় নিযুক্ত দাসীরা থাকিত। এবং তাহাদের নিজ T ব্যবহার্য্য দ্রব্য সামগ্রী থাকিত। এই মহল নূতন, নগেন্দ্রের নিজের প্রস্তুত ; এবং তাহার নিৰ্ম্মাণ অতি পরিপাটি। তাহার পাশে পুজার বাড়ীর পশ্চাতে সাবেক অন্দর। তাহ পুরাতন, কুনিৰ্ম্মিত ; ঘর সকল অমুচ্চ, ক্ষুদ্র এবং অপরিস্কৃত। এই পুরী বহুসংখ্যক আত্মীয়কুটুম্ব-কন্যা, মাসী, মাসীত ভগিনী, পিসী, পিসীত ভগিনী, বিধবা মাসী, সধবা ভাগিনেয়, পিসীত ভাইয়ের স্ত্রী, মাসীত ভাইয়ের মেয়ে, ইত্যাদি নানাবিধ কুটুম্বিনীতে কাকসমাকুল বটবৃক্ষের স্যায়, রাত্রি দিবা কল কল করিত । এবং অনুক্ষণ নানা প্রকার চীৎকার, হাস্য পরিহাস, কলহ, কুতর্ক, গল্প, পরনিন্দ, বালকের হুড়াহুড়ি, বালিকার রোদন, “জল আন” “কাপড় দে” “ভাত রাখলে না” “ছেলে খায় নাই” “জুধ কই” ইত্যাদি শব্দে সংক্ষুব্ধ সাগরবৎ শদিত হইত। তাহার পাশে ঠাকুরবাড়ীর পশ্চাতে রন্ধনশালা। সেখানে আরো জাক কোথাও কোন পাচিক ভাতের হাড়িতে জাল দিয়া পা গোট করিয়া, প্রতিবাসিনীর সঙ্গে র্তাহার ছেলের বিবাহের ঘটার গল্প করিতেছেন। কোন পাচিক বা কাচা কাঠে ফু দিতে দিতে ধুয়ার বিগলিতাশ্রলোচনা হইয়া, বাড়ীর গোমস্তার নিন্দ করিতেছেন, এবং সে যে টাকা চুরি করিবার মানসেই ভিজা কাঠ কাটাইয়াছে, তদ্বিষয়ে বহুবিধ প্রমাণ প্রয়োগ করিতেছেন। কোন সুন্দরী তপ্ত তৈলে মাছ দিয়া চক্ষু মুদিয়া, দশনাবলী বিকট করিয়া, মুখভঙ্গি করিয়া আছেন, কেন না, তপ্ত তৈল ছিটকাইয় তাহার গায়ে লাগিয়াছে, কেহ বা স্নানকালে বহু • তৈলাক্ত, অসংযমিত কেশরাশি চুড়ার আকারে সীমন্তদেশে বাধিয়া ডালে কাটি দিতেছেন— যেন রাখাল, পাচনীহস্তে গোরু ঠেঙ্গাইতেছে । কোথাও বা বড় বঁটি পাতিয়া বামী, ক্ষেমী, গোপালের মা, নেপালের মা, লাউ, কুমড়া, বাৰ্ত্তাকু, পটল, শাক কুটিতেছে ; তাতে ঘস ঘস্ কচ কচ শব্দ হইতেছে, মুখে পাড়ার নিন্দ, মুনিবের নিন্দ, পরস্পরকে গালাগালি করিতেছে । এবং গোলাপী অল্প বয়সে বিধৱা হইল, চাদির স্বামী বড় মাতাল, কৈলাসীর জামাইয়ের বড় চাকরি হইয়াছে—সে দারোগার মুহুরী ; গোপালে উড়ের যাত্রার মত পৃথিবীতে এমন আর কিছুই নাই, পাৰ্ব্বতীর ছেলের মত তুষ্ট ছেলে আর বিশ্ববাঙ্গালায় নাই, ইংরেজেরা না কি রাবণের বংশ, ভগীরথ গঙ্গা এনেছেন, ভট্চাযিাদের মেয়ের উপপতি শু্যাম