পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GV বৃহৎ বঙ্গ মহাবংশের সপ্তমাধ্যায়ে বিজয়ের সিংহল-বিজয় যখন জগতের অনন্যশরণ তথাগত ভুলোকের উদ্ধার সাধন করিয়া চিরমঙ্গলময় শান্তির শেখরদেশে আরোহণপূর্বক নির্বাণ-শয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন সেই মহাজ্ঞানী বাক্যকোবিদগণের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধদেব সমস্ত দেবতাগণের সমক্ষে সন্নিকটে দণ্ডায়মান দেবরাজ ইন্দ্ৰকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, ---“সিংহবাহু-তনয় বিজয় সাত শত সঙ্গিসহ ‘লালদেশ’ তইতে লঙ্কায় আসিতেছে। হে দেবরাজ। লঙ্কায় আমার ধৰ্ম্মমত প্ৰতিষ্ঠিত হইবে, অতএব আপনি সাবধানসভার সহিত বিজয় ও তঁহার সঙ্গীদিগকে লঙ্কায় রক্ষা করিবেন।” যখন দেবরাজ তথাগাতের এই কথা শ্ৰবণ করিলেন, তখনই তিনি তাহার সম্মানার্থ নীলোৎপল বৰ্ণদেবের (বিষ্ণুর ) উপর লঙ্কারক্ষার ভার ও অভিভাবকত্ব প্ৰদান করিলেন । শক্ৰ হইতে এই ভার প্রাপ্তি মাত্ৰ সেই দেবতা লঙ্কায় উপনীত হইয়া কোন ভ্রমণশীল সাধুর ছদ্মবেশে তথায় এক বৃক্ষমূলে উপবেশন করিলেন । বিজয়ের সঙ্গিগণ তথায় উপস্থিত হইয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “মহাশয় । এই দ্বীপের নাম কি ?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “এখানে কোন মানুষ নাই, কিন্তু তোমাদের কোন বিপদ ঘটিবে না৷ ” এই বলিয়া তিনি তঁাহার কমণ্ডলু ঠাইতে তাহদের গাত্রে জল ছিটাইয়া দিলেন, তৎপরে তাঁহাদের হন্তে রক্ষি-বন্ধনপূর্বক আকাশপথে অন্তর্ধান হইয়া গেলেন । তখন তথায় কুকুরীর বেশে এক যক্ষী উপস্থিত হইল। এই যক্ষ ছিল “কুবান্না’ নামী যক্ষীর সহচরী। বিজয়ের এক অনুচর কুকুরীর পশ্চাতে ধাবিত হইল, কিন্তু বিজয তাঁহাকে মানা করিয়াছিলেন। সে ভাবিল, নিশ্চয়ই এখানে কোন পল্লী আছে, নতুবা কুকুর থাকিত না। সেই কুকুরী-বেশিনী যক্ষীর অধিকারিণী কুবল্লা নামী যক্ষী অনতিদূরে এক বৃক্ষের নীচে বসিয়া সন্ন্যাসিনীর ন্যায়। চরকা-দ্বারা সূতা কাটিতেছিল । বিজয়ের অনুচর সন্ন্যাসিনীকে একটা বাপী তীরে বৃক্ষমূলে উপবিষ্ট দেখিয়া সেই পুকুরের জলে স্নান করিয়া জলপান করিল, তৎপরে কতকগুলি পদ্মনাল ভাঙ্গিয়া লইল এবং পদ্মাপত্রে কিছু জল সংগ্ৰহ করিয়া প্ৰত্যাবৰ্ত্তন করিল। যক্ষী তখন তাঙ্কাকে বলিল “যেখানে আছ, ঠিক সেইখানেই থাকি ; এখন তুমি আমার করতলগত হইয়াছে।” এই কথা উচ্চারণ করা মাত্র সেই লোকটি সেখানে বন্দীর মত হইয়া রহিল, তাহার নড়িবার শক্তি লুপ্ত হইল। কিন্তু তাহার হাতে যে রাখী বাধা ছিল তাহার গুণে সেই যক্ষী তাহাকে খাইয়া ফেলিতে পারিল না। যদিও যক্ষী তাহার রাখীটা খুলিয়া ফেলিবার জন্য অনেক অনুরোধ করিল, লোকটি কিছুতেই তাহাতে সন্মত হইল না। তখন যক্ষী তাহাকে আক্রমণ করিল এবং জোর করিয়া একটা গুহার মধ্যে নিক্ষেপ করিল। এইরূপে ক্রমে ক্রমে যক্ষী বিজয়ের সাত শত অনুচরের সকলকেই সেই গুহার মধ্যে নিক্ষেপ করিল।