পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পালরাজত্বের নানাকথা, বাঙ্গলার অপরাপর রাজবংশ Sዓ¢ তিনি প্রিয়দর্শন ও অপরূপ।শ্ৰীসম্পন্ন ছিলেন, তাহার সেই রূপ-সেই সৌন্দৰ্য আর নাই। তিনি রাজান্তঃপুরে প্রবেশ করিতে উন্তত হইলে প্রহরীরা বাধা দিল, কিন্তু সন্ন্যাসীর উপর হস্তক্ষেপ করিতে সাহসী হইল না। রাজ্ঞী অক্ষুন রাজহস্তিত্বারা উহাকে হত্যা করিতে আদেশ করিলেন,-রাজহস্তী স্বীয় প্ৰভুকে চিনিতে পারিয়া হাটু গাড়িয়া তাহার পদতলে বসিয়া পড়িল, তাহার দুইচক্ষু হইতে অজস্র অশ্রু ঝরিতে লাগিল। রাজীী ভীমদৰ্শন রাজকীয় শিকারী কুকুর লেলিয়া দিলেন, ঘোর চীৎকার ও আস্ফালন করিয়া কুকুর যাইয়া সন্ন্যাসীর মুখ দেখা মাত্র তাহার পদলেহন করিতে লাগিল। তখন অশ্রুসিক্ত মুখে রাজী বলিলেন, “বনের পশুরাও তোমাকে চিনিতে পারিয়াছে, আমি তোমার সহধৰ্ম্মিণী হইয়াও তোমাকে চিনিতে পারি নাই।” এই সকল কাব্যকথা পত্নীকথাকে সরস করিয়াছে, ইহাদের ঐতিহাসিক মূল্য কি জানি না । এগুলি হয়ত সত্যই কাব্য-কথা ; কিন্তু গোবিন্দচন্দ্রের সন্ন্যাস-গ্ৰহণ ঐতিহাসিক সত্য, ইহা নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে। রাজেন্দ্রচোলের সঙ্গে ইহার যুদ্ধ ঘটিয়াছিল, পল্লীগাথায় তাহার ইঙ্গিত আছে। রঙ্গপুর অঞ্চল হইতে নীলফামারি সাবডিভিসনের ম্যাজিষ্ট্রেট বিশ্বেশ্বর ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় যে গীতিকা সংগ্ৰহ করিয়াছেন, তাহাতে লিখিত আছে-উড়িষ্যার দক্ষিণ দিক হইতে V *' এক রাজা ৰঙ্গে আসিয়া ইহার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়াছিলেন, কিন্তু তিনি পরাজিত হইয়া তাহার কন্যা গোবিন্দচন্দ্রকে সম্প্রদান করিয়া সন্ধি করেন। এই দক্ষিণউড়িষ্যা হইতে আগত রাজাই সম্ভবতঃ রাজেন্দ্ৰচোল । তিরুমালয় শিলালিপিতে উল্লিখিত হইয়াছে-গোবিন্দচন্দ্ৰ যুদ্ধক্ষেত্র হইতে হাতীর পীঠে চড়িয়া পালাইয়া গিয়াছিলেন, এই রাজা যে পরাস্ত হইয়াছিলেন কিংবা আদৌ কোন যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা পরিষ্কার করিয়া উল্লিখিত হয় নাই। ষােহা হউক অতি অল্প দূর অগ্রসর হওয়ার পরেই রাজেন্দ্ৰচোলকে সন্ধি করিতে হইয়াছিল। সুতরাং দুই দিক্ হইতেই এই ঘটনাটি দুইভাবে বর্ণিত হইয়াছে। রাজাদের স্তাবক কবিদের কথার কতকটা বাদ দিয়া গ্ৰহণ করিতে হয়। রাখালদাসবাৰু লিখিয়াছেন, “শ্ৰীচন্দ্রের বংশধরগণ পরে পালরাজগণের অধীনতা স্বীকার করিয়াছিলেন এবং গোবিন্দচন্দ্র নামক একজন পরবর্তী রাজা রাজেন্দ্ৰচোল কর্তৃক পরাজিত হইয়াছিলেন। এই গোবিন্দচন্দ্র প্রথম মহীপালদেবের সমসাময়িক।” রাখালদাসৰাৰু তাম্রশাসন ও শিলালিপির কথা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করিতেন, ভবিরুদ্ধে যদি সুদীর্ঘকালের কোন জন-প্ৰবাদ বা গাখী। থাকে, তাহার উল্লেখ করাটাও ঐতিহাসিক অঙ্গহানি বলিয়া মনে করিতেন। ইহাও এক প্রকার দুশ্চিকিৎস্ত ব্যাধি। চোলরাজ রাজেক্সের তিরুমালয়ের শিলালিপিতে লিখিত আছে"তিনি কৰ্পভুষণ, চৰ্ম্মপাল্লুক এবং বলয়বিভূষিত মহীপালকে ভীষণ সমরক্ষেত্র হইতে পলায়ম। ফরিদমে আখ্যা করিয়া তাহার অদ্ভুত বলসম্পন্ন হস্তিসমূহ এবং রয়োপষ রমণীগণকে হস্তঞ্চত কুম্বিন্ধছিলেন, এবং বাংলাদেশে যেখানে খড়ম্বষ্টির কখনও বিরাম নাই সেখানে প্রত্নী হইতে নাবিয়া গোমিজ পলায়ন কৰিয়াছিলেন।” A