পাতা:বেলা অবেলা কালবেলা - জীবনানন্দ দাশ.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমরা যদি রাতের কপাট খুলে দিতাম নীল সাগরের দিকে,
বিষণ্নতার মুখের কারুকার্যে বেলা হারিয়ে যেত জ্যোতির মোজেয়িকে৷

দিনের উজান রোদের ঢলে যতটা দূর আকাশ দেখা যায়
তোমার পালক শাদা আরো শাদা হয়ে অমেয় নীলিমায়
ঐ পৃথিবীর সাটিনপরা দীর্ঘ গড়ন নারীর মতো—তবুও তো এক পাখি;
সকল অলাত ইতিহাসের হৃদয় ভেঙে বৃহৎ সবিতা কি!
যা হয়েছে যা হতেছে সকল পরখ এইবারেতে নীল সাগরের নীড়ে
গুঁড়িয়ে সূর্য নারী হল, অকুলপাথার পাখির শরীরে।

গভীর রৌদ্রে সীমান্তের এই ঢেউ— অতিবেল সাগর, নারি, শাদা
হতে হতে নীলাভ হয়;— প্রেমের বিসার, মহিয়সি, ঠিক এ-রকম আধা
নীলের মতো, জ্যোতির মতো। মানব ইতিহাসের আধেক নিয়ন্ত্রিত পথে
আমরা বিজোড়; তাই তো দুধের-বরণ-শাদা পাখির জগতে
অন্ধকারের কপাট খুলে শুকতারাকে চোখে দেখার চেয়ে
উড়ে গেছি সৌরকরের সিঁড়ির বহিরাশ্রয়িতা পেয়ে।

অনেক নিমেষ অই পৃথিবীর কাটা গোলাপ শিশিরকণা মৃতের কথা ভেবে
তবু আরো অনঙ্ককাল ব’সে থাকা যেত; তবু সময় কি তা দেবে।
সময় শুধু বালির ঘড়ি সচল ক’রে বেবিলনের দুপুরবেলার পরে
হৃদয় নিয়ে শিপ্রা নদীর বিকেলবেলা হিরণ সূর্যকরে
খেলা ক’রে না ফুরোতেই কলকাতা রোম বৃহৎ নতুন নামের বিনিপাতে
উড়ে যেতে বলে আমায় তোমার প্রাণের নীল সাগরের সাথে।

না হলে এই পৃথিবীতে আলোর মুখে অপেক্ষাতুর ব’সে থাকা যেত
পাতা ঝরার দিকে চেয়ে অগণ্য দিন,—কীটে মৃণালকাঁটায় অনিকেত
শাদা রঙের সরোজিনীর মুখের দিকে চেয়ে
কী এক গভীর ব’সে থাকার বিষণ্নতার কিরণে ক্ষয় পেয়ে,
নারি, তোমায় ভারা যেত।—বেবিলনে নিভে নতুন কলকাতাতে কবে
ক্রান্তি, সাগর, সূর্য জ্বলে অনাথ ইতিহাসের কলরবে।