পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৫১

অতএব প্রতাপ, আমি প্রাপ্য বলিয়া তাের কাছে কিছুই চাহি না, কখনো চাহিও নাই, আমি কেবল তাের কাছে ভিক্ষা চাহিতেছি—তাও দিবি না?”

 বসন্তরায়ের চোখে জল পড়িতে লাগিল, প্রতাপাদিত্য পাষাণ মূর্ত্তির ন্যায় বসিয়া রহিলেন।

 বসন্তরায় আবার কহিলেন—“তবে আমার কথা শুনিবি না,—আমার ভিক্ষা রাখিবি না—? কথার উত্তর দিবিনে প্রতাপ?”—দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “ভাল—আমার আর একটি ক্ষুদ্র প্রার্থনা আছে, একবার আমি উদয়কে দেখিতে চাই—আমাকে তাহার সেই কারাগৃহে প্রবেশ করিতে কেহ যেন নিষেধ না করে—এই অনুমতি দাও!”

 প্রতাপাদিত্য তাহাও দিলেন না। তাঁহার বিরুদ্ধে উদয়াদিত্যের প্রতি এতখানি স্নেহ প্রকাশ করাতে প্রতাপাদিত্য মনে মনে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। তাঁহার যতই মনে হয় লােকে তাঁহাকেই অপরাধী করিয়া তুলিতেছে, ততই তিনি আরাে বাঁকিয়া দাঁড়ান।

 বসন্তরায় নিতান্ত ম্লান মুখে অন্তঃপুরে ফিরিয়া গেলেন—তাঁহার মুখ দেখিয়া বিভার অত্যন্ত কষ্ট হইল। বিভা দাদা মহাশয়ের হাত ধরিয়া কহিল—“দাদা মহাশয় আমার ঘরে এস।” বসন্তরায় নীরবে বিভার সঙ্গে সঙ্গে বিভার ঘরে প্রবেশ করিলেন। তিনি ঘরে বসিলে পর বিভা তাহার কোমল অঙ্গুলি দিয়া তাঁহার পাকা চুলগুলি নাড়িয়া দিয়া কহিল—“দাদা মহাশয়, এস, তােমার পাকাচুল তুলিয়া দিই।” বসন্তরায় কহিলেন, “দিদি, সে পাকাচুল কি আর আছে? যখন বয়স হয় নাই তখন সে সব ছিল, তখন তােদের পাকাচুল তুলিতে বলিতাম—আজ আমি বুড়া হইয়া গিয়াছি—আজ আর আমার পাকাচুল নাই।”

 বসন্তরায় দেখিলেন বিভার মুখখানি মলিন হইয়া আসিল, তাহার চোখ ছল্‌ছল্‌ করিয়া আসিল। অমনি তাড়াতাড়ি কহিলেন—“আয় বিভা,