পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৭

একটা কাঁচা রাস্তায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অশ্বকে আবার দ্রুতবেগে ছুটাইলেন। একবার তাহার স্কন্ধ চাপড়াইয়া উৎসাহ দিয়া ডাকিলেন, “সুগ্রীব!” সে চকিতে একবার কান খাড়া করিয়া বড় বড় চোখ, বঙ্কিম দৃষ্টিতে প্রভুর দিকে চাহিল, একবার গ্রীবা বাঁকাইয়া হ্রেষাধ্বনি করিল ও সবলে মুখ নামাইয়া রাশ শিথিল করিয়া লইল ও গ্রীবা নত করিয়া ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটিতে লাগিল। দুই পার্শ্বের গাছপালা চোখে ভাল দেখা যাইতেছে না, আকাশে চাহিলে মনে হইতেছে যেন দলে দলে নক্ষত্রেরা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত সবেগে উড়িয়া যাইতেছে এবং সেই স্তব্ধবায়ু আকাশে তরঙ্গিত হইয়া কানের কাছে সাঁ সাঁ করিতে লাগিল। রাত্রি যখন তৃতীয় প্রহর, লােকালয়ের কাছে শৃগালেরা যখন ডাকিয়া গেল, তখন যুবরাজ, শিমুলতলীর চটির দুয়ারে আসিয়া দাঁড়াইলেন, তাঁহার অশ্ব তৎক্ষণাৎ গতজীবন হইয়া ভূমিতে পড়িয়া গেল। নামিয়া তাহার পিঠ চাপড়াইলেন, তাহার মুখ তুলিয়া ধরিলেন, সুগ্রীব বলিয়া কতবার ডাকিলেন, সে আর নড়িল না। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া যুবরাজ দ্বারে গিয়া আঘাত করিলেন। বার বার আঘাতের পর চটির অধ্যক্ষ দ্বার না খুলিয়া জানালার মধ্য দিয়া কহিল—“এতরাত্রে তুমি কেগো?” দেখিল একজন সশস্ত্র যুবক দ্বারে দাঁড়াইয়া।

 যুবরাজ কহিলেন “একটা কথা জিজ্ঞাসা করিব দ্বার খােল।”

 সে কহিল, “দ্বার খুলিবার আবশ্যক কি, যাহা জিজ্ঞাসা করিবার আছে, জিজ্ঞাসা কর না!”

 যুবরাজ জিজ্ঞাসা করিলেন—“রায়গড়ের রাজা বসন্তরায় এখানে আছেন?”

 সে কহিল—“আজ্ঞা সন্ধ্যার পর তাঁহার আসিবার কথা ছিল বটে, কিন্তু এখনাে আসেন নাই। আজ বােধ করি, তাঁহার আসা হইল না।”

 যুবরাজ দুইটি মুদ্রা লইয়া শব্দ করিয়া কহিলেন—“এই লও।”