পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 প্রতাপাদিত্যকে লক্ষ্য করিয়া রমাই কহিল, “অমন, ঢের ঢের আদিত্য দেখিয়াছি। জানেন ত মহারাজ, আদিত্যকে যে ব্যক্তি বগলে ধরিয়া রাখিতে পারে, সে ব্যক্তি রামচন্দ্রের দাস।”

 রাজা মুখ টিপিয়া হাসিতে লাগিলেন। রামমোহন তখন ধীর পদক্ষেপে রাজার সম্মুখে আসিয়া যোড়হস্তে কহিল, “মহারাজ, ঐ বাম্‌না যে আপনার শ্বশুরের নামে যাহা ইচ্ছা তাই বলিবে, ইহা ত আমার সহ্য হয় না; বলেন ত উহার মুখ বন্ধ করি।”

 রাজা কহিলেন, “রামমোহন তুই থাম্।”

 তখন রামমোহন সেখান হইতে দূরে চলিয়া গেল।

 রামচন্দ্র সে দিন বহু সহস্র খুঁটিনাটি পর্য্যালোচনা করিয়া স্থির করিলেন, প্রতাপাদিত্য তাঁহাকে অপমান করিবার জন্য বহু দিন ধরিয়া বিস্তৃত আয়োজন করিয়াছেন। অভিমানে তিনি নিতান্ত স্ফীত হইয়া উঠিয়াছেন। স্থির করিয়াছেন, প্রতাপাদিত্যের কাছে এমন মুর্ত্তি ধারণ করিবেন, যাহাতে প্রতাপাদিত্য বুঝিতে পারেন তাঁহার জামাতা কতবড় লোক।

 যখন প্রতাপাদিত্যের সহিত রামচন্দ্র রায়ের দেখা হইল, তখন প্রতাপাদিত্য রাজকক্ষে তাঁহার মন্ত্রীর সহিত উপবিষ্ট ছিলেন। প্রতাপাদিত্যকে দেখিবামাত্রই রামচন্দ্র নতমুখে ধীরে ধীরে আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলেন।

 প্রতাপাদিত্য কিছুমাত্র উল্লাস বা ব্যস্তভাব প্রকাশ না করিয়া শান্তভাবে কহিলেন,—“এস ভাল আছ ত?”

 রামচন্দ্র মৃদুস্বরে কহিলেন, “আজ্ঞা, হাঁ।”

 মন্ত্রীর দিকে চাহিয়া প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “ভাঙামাথী পরগণার তহশীলদারের নামে যে অভিযোগ আসিয়াছে, তাহার কোন তদন্ত করিয়াছ?”