পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং লক্ষণ।

ধ্বংস হয়। তিনিই সমস্ত আধারের মূলাধার—তিনিই সকল শক্তির মূল শক্তি।

 তিনি নিরবয়ব। তিনি জ্ঞান-স্বরূপ, সুতরাং তাঁহার কোন অবয়ব নাই। জড় বস্তুরই অবয়ব আছে। যাহা খণ্ড খশু করা যায়—যাহার আকৃতি আছে—বিস্তৃতি আছে, তাহারই অবয়ব থাকা সম্ভব। সূর্য-কিরণে উদ্দীপ্ত অতি সূক্ষ্ম বালুকা রেণুও অবয়ব বিশিষ্ট। কিন্তু জ্ঞান পদার্থ নিরবয়ব। জড় বস্তু আকাশ অবলম্বন করিয়া আছে, কিন্তু জ্ঞান বস্তু সে রূপে নাই। আমাদের আত্মাও নিরবয়ব এবং পরমাত্মাও নিরবয়ব।

 তিনি নির্ব্বিকার। তিনি পূর্ণ-মঙ্গল স্বরূপ ইহা বলতেই, তিনি নির্ব্বিকার ইহা বলা হইয়াছে। মনুষ্যের শরীরের বিকার যে রোগ, তাহাও তাঁহাতে নাই, মনুষ্যের মনের বিকার যে পাপ, তাহাও তাঁহাতে নাই। পাপই অমঙ্গল; অত এব মঙ্গল স্বরূপেতে পাপ স্পর্শ করিতে পারে না। তিনি অকায় অব্রণ; তিনি পরিশুদ্ধ অপপ-বিদ্ধ।

 তিনি একমাত্র অদ্বিতীয়। সমুদায় বিশ্বব্যাপার এক প্রকাণ্ড কৌশল যন্ত্রের অন্তর্গত। ব্রহ্মাণ্ডান্তর্গত সমুদায় পদার্থের মধ্যে এক অভেদ্য সম্বন্ধ নিবদ্ধ রহিয়াছে। যিনি জ্যোতির সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনিই নেত্রের সৃষ্টি করিয়াছেন। যিনি ক্ষুধা তৃষ্ণা দিয়াছেন, তিনিই অন্নপান পরিবেশন করিতেছেন। সমুদায় সৃষ্টিই একটী কৌশল যন্ত্র এবং তিনি মাত্র তাহার একই যন্ত্রী—অপর কাহারও হস্ত তাহাতে নাই।