পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
তৃতীয় উপদেশ।

রের নিকটবর্ত্তী হওয়াই আত্মার প্রখর আশা। সেই সত্য পুরুষ এই মহতী আশাকে এখানেই পূর্ণ করিতেছেন। আত্মার সুস্থাবস্থাতে তাহার স্ফ‌ুর্ত্তি ও প্রভা দিন দিন বিবৃদ্ধ হয়। প্রতি সূর্য্যের উদয়ান্তের সঙ্গে সঙ্গে মেদিনীও যেমন নূতন নূতন বেশ ধারণ করে, আত্মাও সেই রূপ নূতন নূতন ভাবে বিরাজ করিতে থাকে। মন ও আত্মা যতই পবিত্র হয় ব্রহ্মানন্দ ততই দীপ্তি পায়। এখানে থাকিয়া ঈশ্বরের সঙ্গে যে সম্বন্ধ নিবদ্ধ করা হয়, অনন্ত কালেও তাহা ক্রটিত হইবার নহে যিনি এক বার আপনাকে উজ্জ্বল রূপে প্রকাশ করিয়াছেন, তিনি আমাদের জ্ঞাননেত্র হইতে আর কখনই অন্তরিত হইবেন না। এই আমাদের স্পৃহা এই আমাদের আশা। চন্দ্র যদিও মলিন হয়—সূর্য্য যদিও নিস্তেজ হয়—নক্ষত্রসকল যদিও নির্ব্বাণ হয়, তথাপি আমাদের আত্মার কখন বিনাশ হইবে না। ঈশ্বর আমাদিগকে তাঁহাকে পাইবার প্রখর আশা দিয়া কদাপি নিরাশ করিবেন না।

 পাপের সহিত লিপ্ত থাকিলে একে এখানে যন্ত্রণা, তাহাতে আবার ঈশ্বর হইতে বিচ্যুতি। আমরা যেন পাপ হইতে সর্ব্বদাই নিবৃত্ত থাকি; পাপকে বিষবৎ পরিত্যাগ করি; পাপচিন্তা, পাপালপ, পাপানুষ্ঠান, এই তিন প্রকার পাপ হইতে যেন প্রাণপণে দূরে থাকি। যদিও কখন পাপ-প্রলোভনে আকৃষ্ট অথবা মুগ্ধ হই, তবে ঈশ্বরের নিকটে অকৃত্রিম অনুশোচনা করিয়া যেন তাহা হইতে বিরত হই। অনুতাপ—অকৃত্রিম অনুতাপই পাপের প্রায়শ্চিত্ত।