পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
চতুর্থ উপদেশ।

জ্ঞানস্বরূপ, তাঁহার প্রাণ জগতের প্রাণ। তিনি জীবিত বস্তু—মৃত বস্তু নহেন। তাঁহার জীবন এক সময় আরম্ভও হয় নাই, তাঁহার জীবনের কখন শেষও হইবেক না, তিনি অমৃত। তাঁহার প্রাণের হ্রাস নাই, বৃদ্ধি নাই; ব্যয় নাই, ক্ষয় নাই—তিনি অমৃত। তিনি জ্ঞানস্বরূপ, চেতনাবান্, স্বপ্রকাশ। তিনি মৃত্যুর বিপরীত বস্তু—তিনি প্রাণ।

 সত্য যে বস্তু, তাহা কি কিছুকাল স্থায়ী, কি অনন্তকাল স্থায়ী? অন্তবৎ বস্তু আর অনন্ত বস্তু, ইহার মধ্যে কাহাকে সত্য বলা যায়? আমরা ঐন্দ্রজালিক ব্যাপারে যে সকল অদ্ভুত ব্যাপার প্রত্যক্ষ করি, তাহাকে মিথ্যা কেন বলি। তাহার এক প্রধান হেতু এই যে তাহা অতি অল্প কাল স্থায়ী। অন্তবৎ বস্তুর সঙ্গে সত্য ভাবের সম্পূর্ণ মিলন হয় না। আমরা চতুর্দ্দিকে যে সমস্ত বস্তু বিরাজমান দেখিতেছি, সে সকল যদিও সৃষ্টিকাল হইতে বর্ত্তমান রহিয়াছে; তথাপি সৃষ্টির পূর্ব্বে তাহার কিছুই ছিল না এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা হইলে পরেও থাকিবেক না; এই জন্য এ সমুদয়কে ঠিক সত্য বলা যায় না। যিনি অনন্ত—যিনি নিত্য—যিনি দেশ কালের অতীত পদার্থ— যিনি পূর্ব্বেও ছিলেন, অদ্যও আছেন, পরেও থাকিবেন; তিনিই সত্য। সত্যের ভাব কেবল সেই অনন্ত স্বরূপেতেই আছে। জড় বস্তু আদ্যন্তবৎ, আমাদের জীবাত্মাও আদ্যন্তবৎ, এই জন্য ইহারা তেমন সত্য নহে।

 যাহা কিছু সত্য বলা যায়, তাহা নার সঙ্গে যোগ থাকিলে হইবেক না। এত কাল আছে, এত কাল নাই—