পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঈশ্বরানুরাগ এবং বিষয়-বিরাগ।
৩১

যে ধর্ম্ম আয়াস সাধ্য অতি কঠোর, তাহাও মধুস্বরূপ প্রতীয়মান হয়। ঈশ্বরই আমাদের সেই অনুরাগের প্রেরয়িতা এবং তিনি নিজেই তাহার বিষয়। তাঁহার জন্য ক্ষুধা তৃষ্ণা হইলে তিনি স্বয়ং আমাদের অন্নপান হয়েন। তাঁহার প্রতি অনুরাগ দৃঢ়তর হওয়া আমারদের সমুদায় ধর্ম্ম কার্য্যের অব্যর্থ ফল; আমরা বিষয়াকর্ষণকে বল-পূর্ব্বক নিরস্ত করিয়া যে অপূর্ব্ব ধর্মশিক্ষা লাভ করি, সে শিক্ষা কেবল ইহারই জন্য যে আমরা সেই সর্ব্বাতীত পরমেশ্বরের সহবাস লাভের যোগ্য হই। আমরা আমাদিগের দুর্ব্বিনীত প্রকৃতিকে বশীভূত করিয়া যে ধর্ম্মবল উপার্জন করি, তাহাতে কেবল আমাদের ঈশ্বরের পথে যাইবার শিক্ষা হয়। আমরা সে মুক্তি লাভের জন্য অনন্ত ভাবী কালের প্রতি দৃষ্টি করিতেছি, ধর্ম্ম আমারদের এই জীবদ্দশাতেই সেই মুক্তির সোপান প্রদর্শন করিতেছেন।

 ধর্ম্ম যেমন আমারদিগকে ব্রহ্মধামে লইয়া যান,সেই রূপ এই পৃথিবী-লোকেও ধর্ম্ম আমারদের মন্ত্রী ও সহায়। কি বিষয়ী ব্যক্তি কি ঈশ্বরানুরাগী; ধর্ম্ম সকলেরই সুহৃৎ ও রক্ষক। যাহারা কেবল বিষয়সুখকেই প্রার্থনা করে, ধর্ম্মপথে থাকিলেই তাহাদের মঙ্গল—এবং যাঁহারা ঈশ্বরকে প্রার্থনা করেন, তাঁহারাও ধর্ম্মকেই অবলম্বন করিয়া তাঁহাকে লাভ করিতে পারেন। এক দিকে শ্রেয়ঃ এক দিকে প্রেয়; এক দিকে সংসার, এক দিকে ঈশ্বর—এ দুয়েতেই সমান অনুরাগ হয় না। যাহাদের সংসারে অনুরাগ, তাহাদের ঈশ্বরে বিরাগ—যাহাদের ঈশ্বরে অনুরাগ তাহা-