পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরলোক।
৪৯

নাকেই আপনি ছেদন করে। আমি আর প্রত্যক্ষের বিষয় নহি, কিন্তু আমি আপনাকেই আপনি বুঝিতে পারি। আমি একই বস্তু—আমার সমুদয় চিন্তা—সমুদয় ভাব—সমুদায় কামনা ইহাতে আশ্রিত রহিয়াছে। আমি বিভাগ যোগ্য নহি। শিশুকালে যে আমি ছিলাম; অদ্যও সেই আমি আছি। আমি স্থ‌ূল নহি, অণু নহি, হ্রস্ব নহি, দীর্ঘ নহি। আমি আকাশে নাই। আমার চিন্তা মস্তিষ্কে আছে—ভাবনা হৃদয়ে আছে—ব্যথা অঙ্গুলিতে আছে; এমত নহে। কিন্তু আমার যে কিছু চিন্তা যে কিছু ভাব, যে কিছু ক্লেশ, তাহা আমারই। সে সকল শরীরে আরোপ করা অতীব ভ্রান্তি। যে হেতু চিন্তা প্রভৃতি সমুদয় বৃত্তি কেবলই আত্মারই। এ সকল আত্মতত্ত্ব বুঝিবার জন্য প্রমাণের গাঢ়ত্ব আবশ্যক করে না।

 আমি এবং আমার শরীর, এ দুইকে পৃথক্ করিয়া বুঝিলে পরকালের প্রমাণ সহজেই হয়। আমি আমার শরীর হইতে ভিন্ন। আমি যখন দূরবীক্ষণ সহকারে গ্রহ উপগ্রহের গতিবিধি নিরূপণ করি; তখন সে দূরবীক্ষণও আমি নহি, এবং আমার চক্ষুও আমি নহি। আমার মস্তিষ্কও আমি নহি, আমার হৃদয়ও আমি নহি। অন্নপানে শরীরের পুষ্টি হইতেছে, রোগ দ্বারা শরীর ক্ষয় হইতেছে এবং কয়েক বৎসরের মধ্যে তাহার প্রত্যেক পরমাণু একেবারে পরিবর্ত্ত হইয়া যাইতেছে; কিন্তু আমি যে একই সে একই রহিয়াছে। বিষয় আর বিষয়ী অন্ধকার আর আলোকের ন্যায় পরস্পর বিভিন্ন স্বভাব। যাঁহারা