পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উঠেছিলাম। আমরা নিয়মিত ব্যায়ামও করতাম। বাড়ির ভিতরেই তার সব ব্যবস্থা ছিল।

অতীতের দিকে তাকিয়ে এখন ভাবি ছেলেবেলায় খেলাধুলা না করে কী ভুলটাই করেছি। মন আমার অকালেই পেকে গিয়েছিল, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিল। গাছপালাই হোক আর মানুষই হোক অকালে পেকে ওঠা কার‍ুর পক্ষেই মঙ্গলজনক নয়, এর কুফল একদিন না একদিন ভুগতেই হবে। ক্রমবৃদ্ধিই প্রকৃতির নিয়ম এবং তার ব্যতিক্রম হলে ফল কখনো ভালো হয় না, এজন্যই অপরয়সে যাদের অস্বাভাবিক প্রতিভা দেখা যায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রতিভার আর কোনো চিহ্নই থাকে না।

বছর দুয়েক এইভাবেই কেটে গেল। শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে বাঙালী, উড়িয়া দুইই ছিল, এবং পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট সদ্ভাব ছিল। তখনকার দিনে প্রতিবেশী এই দুটি প্রদেশের মধ্যে কোনোরকম বিবাদ-বিসম্বাদের কথা শোনা যেত না, অন্তত আমরা তো কখনো শুনিনি। আমাদের পরিবারের কার‍ুর মধ্যেই এ ধরনের সঙ্কীর্ণ প্রাদেশিকতার ভাব ছিল না। এজন্য বাপমায়ের কাছে আমরা ঋণী। উড়িয়াদের সঙ্গে বাবার যথেষ্ট মেলামেশা ছিল এবং অনেক বিশিষ্ট উড়িয়া পরিবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এর ফলে স্বভাবতই তার দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অত্যন্ত উদার ও সহানুভূতিশীল এবং তার প্রভাবে পরিবারের অন্য সকলের মনও একই ছাঁচে গড়ে উঠেছিল। উড়িয়াদের সম্বন্ধে, শ‍ুধু উড়িয়া কেন অন্য যে কোনো প্রদেশের লোক সম্বন্ধেই, বাবার মুখে কখনো কোনো কটুকথা শ‍ুনেছি বলে মনে পড়ে না। বাবার স্বভাব ছিল একটু চাপা ধরনের, সহজে কোনো উচ্ছ্বাস তার মধ্যে প্রকাশ পেত না, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর সংস্পর্শে যেই এসেছে

৩৬