পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোনো সমাধান সে খুঁজে পায় তবে অনেক সময় দেখা যায় তার জীবনদর্শনে বড়রকমের পরিবর্তন ঘটেছে—সবকিছুই তখন সে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে দেখতে শুরু করে এবং প্রচলিত সামাজিক ও নৈতিক আদর্শগুলিকে যাচাই করে দেখবার জন্য স্বকীয় কতকগ‍ুলি মূল্যবোধ নিয়ে বাস্তবের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে। এই সংগ্রামে হয় সে নিজের আদর্শ অনুযায়ী পারিপার্শ্বিককে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়, কিংবা পরাজয় স্বীকার করে বাস্তবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে মানুষের এই সংশয় তার জীবনদর্শনকে কতখানি প্রভাবান্বিত করে তা নির্ভর করে সম্পূর্ণ তার মনের গঠনের উপর। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা একান্ত ব্যক্তিগত ছাড়া আর কিছু নয়। তবে একটা জিনিস সকলের মধ্যেই দেখা যায়। বড় একটা কিছু করতে গেলে জীবনে বিপ্লবের স্থান অপরিহার্য। এই বিপ্লবের দুটি দিক। প্রথমে সংশয়, তারপর পুনর্গঠনের চেষ্টা। আমাদের ব্যবহারিক জীবনে বিপ্লবকে সফল করে তুলতে হলে যে জীবনের মূল সমস্যাগুলির সমাধান করতেই হবে এমন নয়, কারণ এইসব সমস্যাকে আমরা সাধারণত সৃষ্টির মুল রহস্যের অঙ্গীভূত বলেই মনে করি। অতি প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে এবং পাশ্চাত্যে জড়বাদ ও অজ্ঞেয়তাবাদের উপর বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ গড়ে উঠেছে। অবশ্য আমার ক্ষেত্রে ধর্মচর্চাটা ছিল নেহাতই ব্যবহারিক প্রয়োজনে। জীবনের প্রতিপদে যেসব দ্বিধা, যেসব সংশয় মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলতো, সুচিন্তিত একটি জীবনদর্শন ছাড়া আর কিছুতেই তাদের জয় করা সম্ভব ছিল না। বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণ আমাকে এই রকম একটি আদর্শের সন্ধান দিলেন। এই আদর্শকে জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করার ফলে বহু সমস্যা, বহ‍ু সংকট

৬৬