পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

॥ গল্প॥

 সংকলিত গল্পের সংখ্যা পাঁচটি। লেখকের শিল্পীজীবনের দুই পর্বের গল্পই আছে। প্রাগৈতিহাসিক, শৈলজ শিলা, মাটির সাকীতে তিনি জীবনকে শুধু নিজের মত করে দেখেছেন। হারাণের নাতজামাই বা ছোট বকুলপুরের যাত্রীতে মানিকবাবু সংগ্রামী শিল্পী। কমিউনিস্ট কর্মী। ১৯৪৮-৫১-র ভারতের কমিউনিস্টদের ভাবনা ও কর্ম থেকে এই দুটি গল্পকে ছিন্ন করা চলে না।

 তাঁর প্রথম পর্বের গল্প জীবন বিষয়ে তির্যক ও জটিল, জৈবসত্যে নিষ্করুণ, প্রসাধিত সৌন্দর্যঘাতী।

 ‘প্রাগতৈহাসিক’। গল্পটি জৈব অস্তিত্বের সত্যোপলব্ধি। সভ্য পৃথিবীর রুচিচিক্কন সংস্কৃতির অন্তরালবতী শুধু জীবন ধারণের মনহীন গতি, জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার নিয়তি নিয়ন্ত্রিত চক্রাবর্তন। এর ক্ষণিক নিষ্ঠুর পরিচয়ে হৃৎপিণ্ড চঞ্চল হয়। বিশ্ববিধানের মূলে যে শক্তি আছে যা জীবধাত্রী তা-ও তো বিমল। আবেগহীন প্রীতিহীন ভিখুতে, তার পরিচিত জগতে পাপ কত সহজ, হত্যা বিবেকহীন, যৌন লিপ্সায় কোন বাধা নেই। তখন এত সাধের মানব জন্ম সম্বন্ধে ঘৃণা হয় কি? মনে হয় না, মানুষ এমন কি দ্ব্যর্থ?

 ‘শৈলজ শিলা’। এ গল্পে মনই প্রধান। মননে যন্ত্রণা। কামনার আগুনে জ্বলছে বাৎসল্যের পবিত্রতা। বৃদ্ধের মানসবিকার এখানে নির্মম, কিন্তু সহানুভূতিতে দ্রব। মানিকবাবুর সহজ স্বল্পাবেগ ভাষা এ গল্পে ঈষৎ কম্পমান। শিলার প্রেমে, কামবদ্ধ বৃদ্ধের প্রতি মৌন নিশ্চিত অস্বীকারে কিন্তু অক্রোধে বৈশিষ্ট্য বিশেষ নেই।

 ‘মাটির সাকী’। গল্পের কেন্দ্রে দুটি বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকে আলো পড়ায় কিছুটা পূর্বপরিকল্পনার চিহ্ন আছে মনে হয়। শঙ্করদের ক্লিষ্ট জীবনও যে কোনো দিক থেকে হিমানীদের কাম্য হতে পারে এ ভাবনায় বিস্ময় আছে। কিন্তু গল্পের অভিনবত্ব হল হিমানীর প্রসাধনের ফাঁক দিয়ে দেখা হৃদয়-সংবাদে। আরও বেশি করে তার চরিত্রবিকারে মনের ভারসাম্য চ্যুতিতে।

 উত্তর পর্বের জীবন অনেক সরল। মানুষ প্রায় সুনির্দিষ্ট। ঘটনাও যেন পরিকল্পিত। গল্প হয়েছে প্রচার। তার বিরুদ্ধে আভ্যন্তর-যুদ্ধ আছে শিল্পীপ্রাণের। ফলশ্রুতিতে ক্বচিৎ প্রচারও রূপান্তরিত শিল্পে।

১৩