পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আঁদের পাওয়াটাই তার জীবনে সব চেয়ে বড় প্ৰাপ্য। মন্দার গৃহিণীপনার ভিত্তিও ওইখানেই,—সুপ্ৰভাকে সে নয়নের মণি করিয়া রাখিয়াছে। কে বলিবে সুপ্ৰভা তাহার সতীন ? স্নেহে-যত্নে সুপ্রভার দিনগুলিকে সে ভরাট করিয়া রাখে, নিজের হাতে সে সুপ্ৰভাকে সাজায়, সুপ্ৰভাৱ ঘরখানা সাজায়, সুপ্রিভার শয্যা রচনা করিয়া দেয়, সতীনের প্রতি স্বামীর গভীর ভালবাসাকে ? হাসিমুখে গ্রহণ করে । সতীনের সংসারেও তাই এখানে কলহ-বিবাদ মান-অভিমান মন-কষাকষি নাই । মন্দা ভুলিয়া গিয়াছে সে বধু। এই মূল্য দিয়া সে হইয়াছে গৃহিণী । কলিকাতার চেয়ে ঢের বেশি সুখেই শ্যামা এখানে বাস করিতে লাগিল । পরের বাড়ি পরের আশ্রয়ে থাকিবার একটু যা লজ। এখানে আসিবার আগে শ্যামা ভাবিয়ছিল এমন নিরুপায় হইয়া আত্মীয়ের বাড়ি যাইতেছে, পদে পদে কত অপমান সেখানে না জানি তাহার জুটিবে, এখানে কিছু দিন ভয়ে ভয়ে থাকিবার পর দেখিল গায়ে পড়িয়া অপমান কেহ করে না, সে যে এখানে আশ্রিতা, সময়ে অসময়ে সেটা মনে করাইয়া দিবারও কেহ এখানে নাই, মানাইয়া চলিতে পারিলে এখানে বাস করা কঠিন নয় । এখানকার গ্ৰাম্য আবহাওয়াটিও শ্যামার বেশ লাগিল । শহরতলীর যে বাড়িতে বিবাহের পর হইতে এতকাল সে বাস করিয়াছিল। সেখানটা শহরের মতো ঘিঞ্জি নয়, তবু সেখানেও তাহারা যেন বন্দীজীবন যাপন করিত, ইটের অরণ্যের মধ্যে প্ৰকৃতির যেটুকু প্ৰকাশ ছিল তা যেন শহরের পার্কের মতো ছেলে-ভুলানো ব্যাপার। তাছাড়া, সেখানে তােহাৱা ছিল কুণো, ঘরের কোণে নিজেদের লইয়া থাকিত, প্ৰতিবেশী থাকিয়াও ছিল না । এখানে জীবনের সঙ্গে জীবনের বড় নিবিড় মেশামিশি। মিতালি যেখানে নাই সেখানেও অজস্র মেলামেশা আছে, সহজ বাস্তব মেলামেশা, শহরের মেলামেশার মতো কোমল ও কৃত্রিম নয়, খাটি জিনিস। শ্যামার ছেলেমেয়েরা যেন ইপি ছাড়িয়া বঁচিয়াছে। এখানে তাহারা প্ৰকাণ্ড অঙ্গন পাইয়াছে, বাগান পুকুর পাইয়াছে, ধূলামাটিতে খেলা করার সুযোগ পাইয়াছে, আর পাইয়াছে সঙ্গী। বাড়িতেই শ্যামার প্রত্যেকটি be