পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী হালকা হিল্লোলে ভাসিয়া বেড়ায়। বাপ মা আর মেয়েরা যেন বন্ধু, সমানভাবে তাহারা হাসি-তামাসা করে, তাস খেলে চারজনে মিলিয়া, একসঙ্গে সিনেমা দেখিতে যায়। বাড়িতে লোকজনও কি আসে কম ! সকলে তাহারা ধাত্রী ডাকিতে আসে না। অনেক বন্ধুবান্ধব আছে ওদের,-স্ত্রী ও পুরুষ ! তাদের মধ্যে কয়েকটি যুবক যে প্রায়ই কেন আসে শ্যামা তাহ বেশ বুঝিতে পারে। কাঠের বেড়ার একটি ফোকরে চোখ রাখিয়া ও-বাড়িতে পুরুষ ও নারীর নিঃসঙ্কোচ মেলামেশা দেখিয়া শ্যামা থা বনিয়া যায়, গান শুনিতে শুনিতে তাহারা ভাত পোড়া লাগে । বিভা-এ বাড়িতে বেশি আসে না, সে একটু অহঙ্কারী । শামু হরদম আসা-যাওয়া করে। শামুর প্রকৃতিটা শ্যামার একটু অদ্ভুত মনে হয়, একদিকে যেমন সে সরল অন্যদিকে আবার তেমনি পাকা । পোকায় কাটা ফুলের মত সে, খানিক অসাধারণ ভাল খানিক অসাধারণ মন্দ । এমনি বয়সে বিবাহ হইয়া বকুল শ্বশুরবাড়ি গিয়াছে, মেয়েটাকে শ্যামার একটু ভালবাসিতে ইচ্ছা! হয়, শিশুর মত সরল আগ্রহের সঙ্গে শামু তাহার ভালবাসাকে গ্ৰহণ করে, শ্যামা হয় খুশী । কিন্তু বিধানের সঙ্গে শামুৱা আলাপ করিবার ভঙ্গিটা শ্যামার ভাল লাগে না । কেমন সব হেঁয়ালিভরা ঠাট্টা শামু করে, কেমন দুষ্ট্র দুষ্ট্র মুচকি হাসি হাসে, আড়চোখে কেমন করিয়া সে যেন বিধানের দিকে তাকায়, —সকলের সামনে কি একটা অদ্ভুত কৌশলে সে যেন গোপন একটা ভাবতরঙ্গ তার আর বিধানের মধ্যে প্রবাহিত করিয়া রাখে। অতিশয় দুৰ্বোধ্য, সুন্ম ও গভীর একটা লুকোচুরি খেলা । শ্যামা কিছু বুঝিতে পারে না, তবু ভালও তাহার লাগে না । একটু সে সতর্ক হইয়া থাকে। শামু বিধানের ঘরে গেলে মাঝে মাঝে নানা ছলে দেখিয়া আসে ওরা কি করিতেছে । কোনদিন শামুকে বিধান পড়া বলিয়া দেয়, সেদিন শামুৱা শ্রদ্ধাপূর্ণ নিরীহ ভাবটি শ্যামার ভাল লাগে । কোনদিন বিধান জ্ঞানবিজ্ঞানের কথা বলে, বুঝিতে না পারিয়া শামু ফ্যাল ফ্যাল করিয়া তাকায়, আর থাকিয়া থাকিয়া ঢোক গেলে, সেদিনও শ্যামার মন্দ লাগে না । সে অসন্তুষ্ট হয় সেদিন, যেদিন শামু করে- দুষ্টামি। দরজার বাহিরে শ্যামা থমকিয়া দাঁড়ায়। চোেখ ঘুৱাইয়া মুখভঙ্গি করিয়া শামু কথা বলে, বিধানের মুখের কাছে তর্জনী তুলিয়া শাসায়, do R