পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহয়তলী ওদের উপর যাদের বঁাচিয়া থাকা নির্ভর করে তিল তিল করিয়া তাদেরও হত্যা করা সম্বন্ধে। কেমন যেন চালচলন ওদের, কেমন যেন ভাল-মন্দ পাপ-পুণ্যের হিসাব, কোকেনখোরদের মত। মা বোন যখন খাইতে পায় না, বৌ যখন জ্বরে যুঁকিতে যুঁকিতে রান্না করে, পথ্য না দিয়া ছেলেকে কেবল ওষুধ খাওয়াইতে হাসপাতালের ডাক্তার যখন বারণ করিয়া দেন, তখনও সকলের কথা ভুলিয়া গিয়া বাহিরে পুরুষমানুষের স্ফক্তি করিবার ব্যাপারটা যশোদা বুঝিতে পারে। কিন্তু তখন দুশ্চিন্তায় মুখ পাংশু করিয়া কপাল চাপড়াইতে চাপড়াইতে অদৃষ্টকে গাল দিয়া চকচকে জুতাটি পরিয়া চুলে সিঁথি কাটিতে দেখিলে যশোদার রক্তে আগুন ধরিয়া যায়। সাজিতে পার, হাসিতে পার না লক্ষ্মীছাড়া ? গুণ গুণ করিয়া গান ধরিতে পার না। আপনজনের রোগ দুঃখ দুৰ্দশাকে উপেক্ষা করিয়া ? তবে তো যশোদার কিছুই বলিবার থাকে না ! সৰ্ব্বাঙ্গে বাবুত্বের অভ্যাসকে আমল দিয়া দোকান ঘরের সাইনবোর্ডের মত কেবল মুখে দুর্ভাবনার বিজ্ঞাপন লটকাইয়া আবার কোন দেশী দরদ দেখানে ? বাজারে যশোদা গেল না, এ বাড়ীর সদর দরজা দিয়া বাহির হইয়া ও বাড়ীতে ঢুকিয়া পড়িল। চুকিয়াই মনে হইল একটা যেন নূতন জগতে আসিয়া পড়িয়াছে। স্ত্রী-পুরুষ একসঙ্গে বাস করিলে আর সৃষ্টিরক্ষায় মন দিলেই কি তাদের জগৎ এমনভাবে বদলাইয়া যায় ? এই সকালবেলাই ছেলে-মেয়ের কলরবে। আর স্ত্রী-পুরুষের কলহে বাড়ীটা সরগরম হইয়া উঠিয়াছে। কলতলাতে মেয়েদের মধ্যেই ঝগড়া বেশী। পিছনের ছোট পুকুরটি বুজাইয়া দিবার পর আজকাল উঠানে কলের জলের জন্য রীতিমত মারামারি হয়। চার পাঁচজন ছাই দিয়া প্ৰাণপণে বাসন মাজিতেছে, একজন কলসীতে জল ভরিতেছে, দু’জন দাড়াইয়া আছে স্থান খালি হইবার প্রতীক্ষায় । আরেকটা কল এ বাড়ীতে করিয়া না দিলে চলিবে না। দরখাস্ত যশোদা অনেকদিন আগেই করিয়া রাখিয়াছে, কিন্তু কি যে হইয়াছে তার দরখাস্তের, আর কোন পাত্তাই মিলিতেছে না । তাগিদ দিতে গেলে প্ৰকাণ্ড আপিসের এ বলে ওর কাছে যাও, ও বলে তার কাছে যাও, ভাল করিয়া কথার জবাবটাও দিতে চায় না কেউ। একটা জলের কল বসাইবার ३७४