পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যশোদা বড় ব্যস্ত, একেবারে সময় পায় না। দুটি বিবাহের হাঙ্গামা চুকিতে না চুকিতে সত্যপ্রিয় মিলে জোরালো ধৰ্ম্মঘটের আয়োজন আরম্ভ হইয়া গিয়াছে। সৰ্ব্বদা যশোদার কাছে লোকজন আসে যায়, তার সঙ্গে পরামর্শ কৱে, শ্রমিকদলের সভায় গিয়া তাকে বক্তৃতা করিতে বলে। যশোদার পরামর্শের ধরণটা একটু বিচিত্র। খুটিয়া খুটিয়া সে কেবল প্রশ্নের পর প্রশ্ন করিয়া যায় অথবা যারা পরামর্শ করিতে আসে তাদের কথা কাটাকাটি মন দিয়া শোনে। তারপর একেবারে মত প্ৰকাশ করে ঃ এখন করলেও চলে অবিশ্যি, কিন্তু কিছুকাল পরে করলেই ভাল হত । বক্তৃতা করা সম্বন্ধে হাত জোড় করিয়া বলে, “ওটি মাপ করতে হবে । আমি মুখুযেসূখুঢ়া মানুষ, অত ভণিতে করে সাজিয়ে গুছিয়ে বলা আমার কন্মো নয়। দু’দশজনে এলে, কথাবাৰ্ত্তী কইলাম, সে আলাদা । ভাবলে গায়ে কঁাটা দেয়, ব্যক্তিমে করব কি গো !” অপরাজিতার সম্বন্ধে জ্যোতিৰ্ম্ময়াকে সতর্ক করিয়া দিবে। ভাবিয়াছিল, নানা হাঙ্গামায় যাওয়া হয় নাই। মাঝখানে অপরাজিতা আর একদিন তাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিল, সেদিন তার অবস্থা দেখিয়া সত্য সত্যই যশোদার বড় ভাবনা হইয়াছে। একদিন যশোদা জ্যোতিৰ্ম্ময়ের সঙ্গে দেখা করতে গেল । বড় ব্যস্ত জ্যোতিৰ্ম্ময় । সত্যপ্ৰিয়ের কন্যার বিবাহ উপলক্ষে শ্ৰীতিউপহারের পদ্য লিখিতেছে। একটি দুটি নয়, অনেকগুলি। মা-বাবা, মাসী-পিসী, খুড়া-জেঠী, দাদা-দিদি, বৌদিদি, ভগ্নীপতি ইত্যাদি নানা সম্পর্কের উপযোগী আশীৰ্বাদে গুরুগম্ভীর অথবা হাসিতামাসায় হাঙ্কা পদ্য লিখিতে হইবে। প্ৰত্যেক পদ্যের শেষে ভগবানের কাছে প্রার্থনা থাকিবে যে, নবদম্পতি যেন সখী হয়। একটু ক্লিষ্ট দেখাইতেছে জ্যোতিৰ্ম্ময়কে, অসূখী মনে হইতেছে। শ্ৰীতি-উপহারের পন্থ লিখিবার পরিশ্রমে নয়, সেই নেকলেসটার জন্য। নেকলেসটা যেন পাইয়া বসিয়াছে জ্যোতিৰ্ম্ময়কে, ক্রমাগত পীড়ন করিতেছে। ভাবিয়া সে কিছু ঠিক করিতে পাৱে না । সত্যপ্রিয় তাকে এমনভাবে ঠিকাইবে কেন ? এমন কোন কথা ছিল না যে, কৰ্ম্মচারীর বেীকে তার হাজার টাকা দামের গহনা দিতেই হইবে, না দিলে লোকে নিন্দ কৰিবে, তাই বাধ্য হইয়া কোনরকমে সেদিন মান্নরক্ষা করিতে হইয়াছে। eYo