পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহৱতলী চাকরী নিয়েছে। নইলে এতগুলো পাশ ক’রে কেউ কুলি-মজুরের কােজ নেয় ? খেটে খেলে লোকের কাছে মাথা হেঁট হবার কি আছে বলুন তো দিদি ? রাত্তিরে আমার জা’ কি সব পরামর্শ দিল কে জানে, সকালে আমার ভাসুর ওকে বললেন, কি, হয় এ-কাজ ছেড়ে দাও, নয়। আমার বাড়ী থেকে বেরোও । ফিক্‌ করিয়া সে আবার হাসিল, “না, ঠিক ওমনিভাবে বলেন নি, তবে, মোট কথাটা দাড়াল ওই । আমরাও তাই চলে এলাম।” ছেলেটির নাম অজিত, মেয়েটির নাম সুব্ৰতা । “তোমার ডাক নাম কি বোন ? সুব্ৰতা বলে’ ডাকতে পারব না। ’ “আমার ডাক নাম নেই।”-সুব্ৰতা হাসে । অজিত বলে, “ ওর ডাক নাম হ’ল গিয়ে-’ সুব্ৰতা চোখ পাকাইয়া বলে, “দ্যাখো, ভাল হবে না। কিন্তু !” অজিত হাসিমুখেই চুপ করিয়া থাকে। তখন সুব্রতা বলে, “আচ্ছা, বলে । কি আর হবে, আজ হোক কাল হোক জানতে তো পাবেন-ই !” এই সামান্য হাসি-তামাসার ব্যাপারেও মনে হয়, অজিত যেন বৌ-এর বড় বাধ্য । সুব্রতার কৃত্ৰিম চোখ-পাকানো রাগকে পৰ্য্যন্ত সে সম্মান করিয়া চলে । প্রথমটা যশোদার একটু কেমন কেমন লাগিয়াছিল, তারপর দু’একটা দিন যাইতে না যাইতে সে টের পাইয়াছে, এটা দু’জনের একটা ভালোবাসার খেলা মাত্র । দু’জনে বড় মজা পায় এ খেলায়। এই বয়সের দু’টি ছেলেমেয়ের মধ্যে, মিলন যাদের হইয়াছে মোটে ছ’মাস আগে, এমন একটা আশ্চৰ্য্য মিল আছে মনের যে যেটুকু যশোদা বুঝিতে পারে তাতেই সে অবাক হইয়া যায়। সুব্ৰতা যদি আব্দার ধরে, আমায় আকাশের চাদ পেড়ে দাও,-আদর দিলেই বৌরা সময় অসময়ে যে আব্দার ধরিয়া স্বামীদের মেজাজ বিগড়াইয়া দেয়,- অজিত সঙ্গে সঙ্গে বলে, দিচ্ছি পেড়ে । সুব্ৰতা জানে অজিত বুঝিবে এটা তার আবদার, সুব্রতার এই জানা অজিত জানে, অজিতের এই জানাও সুব্ৰতা জানে, আবার সুব্রতার-দু’জনের জানাজানির এই প্রক্রিয়া যশোদার মনে হয় অন্তহীন আর বৃহস্যময়, তবু যেন দু’জনের মধ্যেই এর সর্বাঙ্গীণ পূর্ণতা ঘটিয়াছে, Nobyo R6t