পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহয়তলী প্ৰথমে পরিচয় করিতে গেল সব চেয়ে কাছের বাড়ীর এবং সম্ভবতঃ ছোটখাট একটা পরিধির মধ্যে সবচেয়ে গরীব ও অতি-ভদ্র পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে । পরিবারটি অমূল্য নামে একজন বছর পঞ্চাশেক বয়সের রোগজীর্ণ কেরাণী ভদ্রলোকের। যশোদার সঙ্গে এবাড়ীর মেয়েদের ঘনিষ্ঠতা না থাকিলেও পরিচয় আছে অনেকদিনের। পরদিনই ওবাড়ীর সাত হইতে চল্লিশ পৰ্য্যন্ত বিভিন্ন বয়সের আটজন মেয়ে যশোদার বাড়ী বেড়াইতে আসিল । সাত বছর বয়সের মেয়েটির রঙীন কাপড় পরার ভঙ্গি দেখিয়া মনে হইল, যৌবনে পা দিয়া তাড়াতাড়ি দলের তিনটি তরুণী মেয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে যেন তার তর সহিতেছে না । অনেকদিন আগে অমূল্যর বাড়ীর মেয়েরা দু’একবার যশোদার বাড়ী বেড়াইতে আসিয়াছিল। যশোদা তখনও কুলি-মজুরদের বাড়ীতে ভাড়াটে রাখিতে আরম্ভ করে নাই । তারপর নানা আপদে বিপদে মাঝে মাঝে যশোদাকে তারা ডাকিয়াছে বটে, কিন্তু যশোদার বাড়ীতে কখনো আসে নাই । আজও তারা যশোদার কাছে আসে নাই, আসিয়াছে সুব্রতার নতুন সংসার দেখিতে । অমূল্যর স্ত্রী আশাপূর্ণ পান চিবাইতে চিবাইতে বলিল, “আমরা এলাম। কই, তোমার নতুন ভাড়াটে চাদের-মা ?” যশোদা বলিল, “আমার নতুন ভাড়াটেকে খুজিছ পাচুর মা ? এসো, বসবে এসে ।” আশাপূর্ণর পান চিবান বন্ধ হইয়া গেল। এতকাল কুলি-মজুরের সঙ্গে কারবার করিয়া প্ৰায় তাদের মত বনিয়া গিয়া এখনো তাকে সমানের মত সম্বোধন করার মত ভদ্রতা যশোদার কাছে, সে তা কল্পনাও করে নাই । কয়েক মাসের মধ্যে দেখা গেল যশোদার বাড়ীতে দুপুরবেলা রীতিমত মেয়েদের বৈঠক বসিতে আরম্ভ করিয়াছে। দু’একটি মেয়ে নয়, উকিল, ডাক্তার, মাষ্টার, প্রফেসর, কেরাণী, জীবনবীমার এজেন্ট প্রভৃতি অনেক রকম ভদ্রলোকের বাড়ীর অনেক মেয়ে। সকলের বাড়ী যে খুব কাছে তাও নয়। বড় রাস্তার ধারের কয়েকটি বাড়ীতে পৰ্য্যন্ত সুব্রতা তার পরিচয়ের অভিযান আগাইয়া নিয়া গিয়াছে। হাসি-গল্প গান-বাজনায় যশোদার বাড়ী দুপুরবেলা মুখরিত হইয় ওঠে। v9S&