পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী দেখিলেই যশোদার মনটা কেমন করিয়া ওঠে । ক’দিন আগে দুপুৱাবেল কি দরকারে সে মাকে ডাকিতে আসিয়াছিল, তখন তার চোখে যশোদা যেন দেখিতে পাইয়াছিল, একটা চাপা-পড়া লাজুক ভাবপ্রবণ ক্ষুধা । “ব’লগে যা, আসছি’ বিলিয়া ছেলেকে বিদায় দিয়া হাতের তাস নামাইয়া সকলের দিকে চাহিয়া অতসী তৃপ্তির হাসি হাসিয়াছিল,-সগৰ্ব্বে ।-“আর- বছর ডাক্তারি পাশ করবে। এক বাড়ীতে দুজন ডাক্তার হবে, রুগীকে আর ফিরতে হবে না-একজন বাড়ী না থাক আরেকজন তো থাকবে, কি বলেন ? পাশ করেই অবিশ্যি ওনার মত চার টাকা ফি করলে চলবে না, প্ৰথম দু’চার বছর দু’টিাকা করে, তারপর পাশার বাড়লে চার টাকা । উনি হয়তো তদিনে আট টাকা ফি করে ফেলবেন, এখন থেকেই বলছেন, চার টাকায় আর পোষায় না।--” নন্দর কাছে রমেন কীৰ্ত্তন শিখিতে অসিত। তখনও তাকে দেখিয়া যশোদার মনে হইত, ডাক্তারি বিদ্যার চাপে ছেলেটা যেন দিন দিন কুকড়াইয়া যাইতেছে। দেহতত্ত্ব জিজ্ঞাসু বৈষ্ণবের ছাচে ঢালিয়া মানুষ করিয়া ছেলেকে মড়া কাটিতে পাঠানোর জন্য অতসীর গৰ্ব্ব দেখিয়া একটা দুৰ্ব্বোধ্য বন্ধনের অনুভূতিতে যশোদাকে ব্যাকুলভাবে একবার জোরে শ্বাস টানিতে হইয়াছিল। সন্ধ্যার পর যশোদার মনে হইয়াছিল, কেবল রমেন তো নয়। সুন্দরী বড় মেয়েটাকে আই. সি. এস. বরের উপযোগী লেখাপড়া চালচলন শিখাইয়া তার চেয়ে অশিক্ষিত মাঝ বয়সী গেয়ে রাজার রাণী করিয়া দেওয়া হইয়াছে । কেবল অতসীও তো নয় । একে একে অন্য গিন্নিদের ছেলেমেয়ের কথাও যশোদার মনে পড়িয়াছিল। মনে হইয়াছিল, যেন এক ধরণের জীবন যাপনের জন্য সকলেই যেন অন্য ধরণের জীবন যাপনের উপযোগী করিয়া ছেলেমেয়েগুলিকে মানুষ করে । যশোদা বড়ই মমতা বোধ করিয়াছিল। এদিক দিয়া কুলি-মজুরেরাও ভাল। আধমরা পশুর মত জীবন হোক, ছেলেমেয়েগুলি তাদের আধমরা পশুর মত জীবন যাপনের জন্যই জন্ম হইতে তৈরী হয় । সুকুমার উকিলের স্ত্রী বনলতাও ফস এবং মোটা। সৰ্ব্বদা পান খায়। সুযোগ পাওয়া মাত্র রোয়াকে দাড়াইয়া মুখভরা পান চিবাইতে চিবাইতে চুপি চুপি সে যশোদাকে বলে, “চার টাকা না চারশো টাকা। যা মুখে আসে বললেই SPQ