পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী সেকেলে, গোয়ো আর অসভ্য মনে করে ভাবিয়া বড়ই মনের কষ্টে সে দিন কাটায় । বাহিরের লোকের সঙ্গে কথায় ব্যবহারে সে বিনয়ের অবতার, যশোদার সঙ্গে পৰ্য্যন্ত এমন মুখ কঁচুমাচু করিয়া কথা বলে যে দেখিলে হাসিও পায়, মমতাও হয় । রাতে ঘুমের মধ্যেও হয়তো বাপের ভয়ে মহীতোষ চমকিয়া জাগিয়া ওঠে, কিন্তু বাড়ীতে যারা আশ্রিত ও আশ্রিতা, আফিসে ও কারখানায় যারা জীবিকার প্রত্যাশী। তাদের সঙ্গে তার ব্যবহার বড় খারাপ। কথায় কথায় কারণে অকারণে রাগিয়া যায়, গালাগালি দেয়, অপমান করে। অজিতের সঙ্গে মহীতোষের বন্ধুত্ব না হয় আছে, কিন্তু মহীতোষ কি জানে না বন্ধু তার যশোদার বাড়ীতে থাকে ? যশোদার বাড়ীর ভাড়াটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠত করার সাহস সে পাইল কোথায় ? শ্রমিক সমিতির সভায় গিয়া যশোদা যে বিশেষ খুন্সী হইল তা বলা যায় না, তবে তেমন খারাপও তার লাগিল না । পরিচালক সমিতির সভায় বড় বেশী তর্ক চলে, নিজের নিজের মতামতটা জাহির করিবার জন্য অনেকে বড় ব্যস্ত। বড় বড় কথাও অনেক বলা হয়, একেবারে নাটকীয় ভঙ্গীতে, অবরুদ্ধ একটা উত্তেজনা যেন বক্তার অসন্থ হইয়া উঠিয়াছে। তবে সকলে এরকম নয়, শান্ত ও সংযত মানুষও কয়েকজন আছে, ভাবিয়া চিন্তিয়া হিসাব করিয়াই যাৱা কথা বলে । কিন্তু এদেরও আসল বক্তব্যটা যশোদা আগাগোড়া ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছিল না। খানিকক্ষণ হয়তো কথাগুলি জলের মত পরিষ্কার বুঝা যাইতে লাগিল তারপর হঠাৎ কখন কি ভাবে যে সমস্ত বিষয়টা জটিল আর দুৰ্বোধ্য হইয়া গোল কিছুই যশোদার মাথায় ঢুকিল না। তবে সেজন্য এদের সে দোষ দিল না, অপরাধটা ধরিয়া নিল নিজের বুদ্ধির। এরা সমস্ত জগতের শ্রমিকদের অবস্থা জানে, শ্রমিক সমস্যা এর বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিশ্লেষণ করিয়াছে, এদের সমস্ত তর্কবিতর্ক পরিষ্কার বুঝিবার মত জ্ঞান সে কোথায় পাইবে ? তার মত ঠেকৃনো দিয়া দশবিশজন শ্রমিককে কোন রকমে খাড়া রাখিবার ব্ৰত এদের নয়, ধনিক-তন্ত্রের চোরাবালির গ্রাস হইতে সমস্ত শ্রমিককে বঁাচাইয়া শক্ত মাটিতে তাদের দাড়ানোর ব্যবস্থা করা এদের কাজ । সে কাজের বিরাটত্ব কল্পনা করিয়া যশোদার মাথা ঘুরিয়া যায়। কুলিমজুরের সঙ্গে সে মিশিয়াছিল, তাদের কয়েকজনকে ভাল বাসিয়াছিল, একটা 889