পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰতিবিম্ব কিন্তু হায়রে তারকের ভাগ্য, পাঁচ মাসের মধ্যে এমন বেশ বৌটি কি না তাকে জিজ্ঞেস করে বসল, “তুমি চাকরী কর না কেন ?? তারক আহত হল। রাগ করে বলল, “আমার খুলী।” বলার সময় গলায় জড়ানো বৌয়ের লতাবৎ হাতটি খুলে সে বোধ হয় ছুড়ে দিয়েছিল। এ অবস্থায় সব বৌ কঁাদে, বিনিয়ে বিনিয়ে মিনিয়ে মিনিয়ে কঁাদে । যে কান্না কোন নতুন স্বামীর সয় না। অনেক সাধ্যসাধনায় কান্না থামিয়ে তাৱক বোঁকে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করল, কেন সে চাকরী করবে না। বৌ চুপ করে শুনে গেল। তাকে বড় বেশী চুপচাপ মনে হওয়ায় সন্দেহের বশে অধ্যাপনা বন্ধ করে পরীক্ষা করে তারক দেখতে পেল, বৌ তার ঘুমিয়ে পড়েছে। চাকরীর কথা বৌয়ের মুখে আর শোনা গেল না। মাসখানেক পরে বোঁকে নিয়ে তারক গেল। শ্বশুরবাড়ি । সারাটা দিন জামাই আদর ভোগ করার পর সে যখন জীবনের তুচ্ছতম ক্ষুদ্রতম সমস্যাট পৰ্যন্ত ভুলে গেছে, তখন শ্বশুরমশায় তাকে ডেকে পাঠালেন বৈঠকখানায়। ঘরে পুরানো লণ্ঠনের আলো, কাঠের তাকে আর দরজা খোলা কাঠের আলমারিতে আদালতী নথিপত্রের পুরানো ধূলিমলিন স্তুপ। একেবারে চাষা। মক্কেলদের বসবার জন্য লম্বা বেঞ্চি আছে ; একটু ভদ্র চাষীদের জন্য আছে মানুষের ঘষায় ঘষায় পালিশ করা চাটাই বিছানো নীচু তক্তপোষ। শ্বশুর মশায় টেবিল নিয়ে চেয়ারে বসেন । অতিরিক্ত একটা চেয়ার ও একটা টুল আছে। সমস্ত আসবারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি অত্যন্ত মোটা । সময়ের পোকা ভেতর থেকে জীৰ্ণ করে না ফেললে শত বছরেও ভাঙবে না । মদন মোক্তার খানিকক্ষণ সম্পূর্ণ অন্য কথার ভূমিকা করে বললেন, "চাকৰী করে দেব কথা দিয়ে মেয়ে দিয়েছিলাম। বাবা, ক’মাস ধরে সেই চেষ্টাই করছি। যুদ্ধের। চাকরী ছাড়া তো চাকরীই নেই। আজকাল। রায় সাহেব মজুমদার মশায় একটু খাতির করেন আমায়, তিনি একটা চাকরীর ভরসা দিয়েছেন। যুদ্ধের চাকৰীতবে যুদ্ধে টুদ্ধে যেতে হবে না। আপিসের কাজ, মাঝে মাঝে এদিক ওদিক একটু ঘুরে আসা, আর কিছু নয়।’ সব ঠিক হয়ে আছে। দরখাস্ত পৰ্যন্ত তারককে পাঠাতে হবে না । রায় সাহেবের একখানা চিঠি নিয়ে কলকাতায় গিয়ে বড় সাহেবের সঙ্গে দেখা করলেই চাকৰী হয়ে যাবে। বড় সাহেব বাঙ্গালী, অত্যন্ত ভােলমানুষ। হাসিমুখে হয়তো হ’চাৱােট O