পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্রন্থাবলী মতো এই নিস্ক্রিয়তার মূল উৎস হচ্ছে, বর্তমান জগতের বাস্তব পরিস্থিতিতে প্ৰগতিশীল শিল্পী ও সাহিত্যিকদের ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের দ্বিধা-সংশয়হীন সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব। আদর্শগত দ্বিধাসংশয় দেশের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রগতিশীল শক্তির বিরাট অভু্যত্থান সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে আমরা প্ৰগতির ক্ৰমবিকাশের পথে এগিয়ে এনেছি जडJ. কিন্তু এগিয়েছি আমরা দ্বিধাগ্ৰস্তভাবে, বাস্তবতার দ্রুত রূপান্তরের অনেকখানি পিছনে পিছনে। আদর্শ ও বাস্তবের সমন্বয় করতে, সত্যোপলব্ধির আলোতে আজকের দিনে প্রগতিশীল শিল্পী ও সাহিত্যিকদের লক্ষ্য কি, কর্তব্য কি, এ বিষয়ে দ্বিধাহীন, আপোষহীন শাণিত তীক্ষু আহবান, সংঘ দিতে পারেনি । সংঘের গত কয়েক বছরের ইতিহাস সমগ্ৰ দৃষ্টিতে বিচার করলে এই দুর্বলতার সুস্পষ্ট চেহারা এবং এই দুর্বলতা সত্ত্বেও, প্ৰগতিশীল চিন্তাধারা ও আন্দোলনের অভূতপূর্ব প্রসার আমাদের কাছে ধরা পড়ে । যুদ্ধের সময় সংঘের ফ্যাসি-বিরোধী আন্দোলনের প্রসার লাভ ও শক্তিশালী বৃহৎ সংগঠন গড়ে ওঠা, বিস্ময়কর দ্রুততার সঙ্গে সংঘটিত হয়। এই সাফল্যের একটি বিশেষ তাৎপৰ্য আজ আমাদের লক্ষ্য করা প্রয়োজন । ১৯৪৪ সালের গোড়ার দিকে সংঘের কেন্দ্ৰীয় শাখার সভ্যসংখ্যা ছিল মাত্ৰ ৭৫ জন-এক বছরের মধ্যে এই সংখ্যা দাড়ায় ৪৪২ জন ; সংঘের শাখা ছিল মাত্র ২টি, বাংলার বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় ১৪টি শাখা গড়ে ওঠে । কেন্দ্ৰ ও শাখাগুলির মোট সভ্যসংখ্যা হাজারের উপরে উঠে যায়। কলিকাতা ও মফঃস্বলে বহু সাংস্কৃতিক সভা, শিল্প-সাহিত্য ও সমাজ-জীবনের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা, পুস্তক প্ৰকাশ, লাইব্রেরী পরিচালনা প্ৰভৃতি নানা কাজের মধ্যে আন্দোলন অসাধারণ শক্তি সঞ্চয় করে । কেবল বাংলায় নয়, সারা ভারতে ফ্যাসি-বিরোধী আন্দোলনের সধ্যে সংঘের সর্বভারতীয় বিরাট সংগঠন গড়ে ওঠে। এই অসাধারণ সাফল্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, আদর্শ ও আন্দোলন সম্পকিত একটি সহজ সত্যই আরেকবার প্রমাণিত হয়েছিল। এই সাফল্যের মধ্যে যে, আদর্শ ও সংগঠন পরস্পর নিরপেক্ষ নয়। আদর্শে খুঁত থাকবে, অথচ সংগঠন নিখুঁত হবে, বা সংগঠনে খুঁত রেখেও নিখুত আদর্শ সার্থক Ο Ο