পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

 — দিয়েছি।

 — মুদী আজ সত্যভামাকে তাগিদ দিয়েছে। তামাক পুড়ে গেছে, এবার রাখো, দেব আরেক ছিলিম সেজে?

 শীতল বলে — না থাক।

 — আবোল তাবোল খরচ করে কেন যে টাকাগুলো নষ্ট কর, দোতলায় একখানা ঘর তুলতে পারলে একটা কাজের মত কাজ হত, টাকা উড়িয়ে লাভ কি?

 তারপর তাহারা ঘরে যায়, মণি আর বুকুর মাঝখানে শ্যামা শুইয়া পড়ে। বিধান একটা স্বতন্ত্র ছোট চৌকিতে শোয়, শোয়ার আগে একটি বিড়ি খাইবার জন্য শীতল সে চৌকিতে বসিবামাত্র বিধান চীৎকার করিয়া জাগিয়া যায়। শীতল তাড়াতাড়ি বলে, আমি রে খোকা, আমি, ভয় কি? — বিধান কিন্তু শীতলকে চায় না, সে কাঁদিতে থাকে।

 শ্যামা বলে — আয় খোকা, আমার কাছে আয়।

 সে রাত্রে ব্যবস্থা উল্টোইয়া যায়। শীতলের বিছানায় শোয় বিধান, বিধানের ছোট্ট চৌকিটিতে শীতল পা মেলিতে পারে না। একটা অদ্ভুত ঈর্ষার জ্বালা বোধ করিতে করিতে সে মা ও ছেলের আলাপ শোনে।

 — স্বপন দেখেছিলি, না রে খোকা? কিসের স্বপন রে?

 — ভুলে গেছি মা।

 খুকীর গায়ে তুমি যেন পা তুলে দিও না বাবা।

 — কি করে দেব? পাশ বালিশ আছে যে?

 — তুই যে পাশ বালিশ ডিঙ্গিয়ে আসিস। বালিশের তলে কি হাতড়াচ্ছিস?

 — টর্চটা একটু দাও না মা।

 — কি করবি টর্চ দিয়ে রাত দুপুরে? এমনি জ্বেলে খরচ করে ফ্যালো, শেষে দরকারের সময় মরব এখন অন্ধকারে।

 একটু পরেই ঘরে টর্চের আলো বারকয়েক জলিয়া নিবিয়া যায়। দেয়ালের গায়ের টিকটিকির ডাক শুনিয়া বিধান তাকে খুঁজিয়া বাহির করে।

 — নে হয়েছে, দে এবার।

 — জল খাব মা।

 জল খাইয়া বিধান মত বদলায়।

৬০