পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰাগৈতিহাসিক করিয়া উঠিতে পারিল না। পেহলাদ ও তাহার বোনাই তাহাকে মারিতে মারিতে আধমারা করিয়া ফেলিয়া বাড়ীর বাহির করিয়া দিল। ভিখুৱ শুকাইয়াআসা ঘা ফাটিয়া রক্ত পড়িতেছিল, হাত দিয়া রক্ত মুছিতে মুছিতে খুঁকিতে ধুকিতে সে চলিয়া গেল। রাত্রির অন্ধকারে সে কোথায় গেল কেহই তাহা জানিতে পারিল না বটে, কিন্তু দুপুৱা রাতে পেহলাদের ঘর জ্বলিয়া উঠিয়া বাগদী পাড়ায় বিষম হৈ চৈ বাধাইয়া দিল । পেহলাদ কপাল চাপড়াইয়া বলিতে লাগিল, “হায় সৰ্বনাশ, হায় সৰ্ব্বনাশ । ঘরকে আমার শনি আইছিলো গো, হায় সৰ্বনাশ ।” কিন্তু পুলিশের টানাটানির ভয়ে মুখ ফুটিয়া বেচাৱী ভিখুৱ নামটা পৰ্যন্ত করিতে পারিল না । সেই রাত্রি হইতে ভিখুৱ আদিম, অসভ্য জীবনের দ্বিতীয় পৰ্য্যায় আরম্ভ হইল। চিতলপুরের পাশে একটা নদী আছে। পেহলাদের ঘরে আগুন দিয়া আসিয়া একটা জেলে ডিঙ্গি চুরি করিয়া ভিখু নদীর স্রোতে ভাসিয়া গিয়াছিল। লাগি ঠেলিবার সামর্থ্য তাহারে ছিল না, একটা চ্যাপ্টা বঁাশকে হালের মত করিয়া ধরিয়া রাখিয়া সে সমস্ত রাত কোন রকমে নৌকার মুখ সিধা। রাখিয়াছিল। সকাল হওয়ার আগে শুধু স্রোতের টানে সে বেশীদূর আগাইতে পারে नाझे । r ভিখুৱ মনে আশঙ্কা ছিল ঘরে আগুন দেওয়ার শোধ লইতে পেহ্লাদ হয় ত তাহার নামটা প্ৰকাশ করিয়া দিবে, মনের জ্বালায় নিজের অসুবিধার কথাটা ভাবিবে না। পুলিশ বহুদিন যাবত তাহাকে ধরিবার চেষ্টা করিতেছে, বৈকুণ্ঠ সাহার বাড়ীতে খুনটা হওয়ার ফলে চেষ্টা তাহদের বাড়িয়াছে বই কমে নাই । পেহলাদেৱ কাছে খবর পাইলে পুলিশ আশে পাশে চারিদিকেই তাহার খোজ করিবে বিশ ত্ৰিশ মাইলের মধ্যে লোকালয়ে মুখ দেখানে তাহার পক্ষে বিপদের কথা। কিন্তু ভিখু তখন মমিয়া হইয়া উঠিয়াছে। কাল বিকাল হইতে সে কিছু খায় নাই। দু’জন যোয়ান মানুষের হাতে বেদম মাৱ খাইয়া এখনো দুৰ্বল শরীরটা তাহার ব্যথায় আড়ষ্ট হইয়া আছে। ভোর ভোর মহকুমা সহরের ঘাটের সামনে পৌছিয়া সে ঘাটে নৌকা লাগাইল। নদীর জলে ডুবিয়া ডুবিয়া স্নান করিয়া গায়ের রক্তের চিহ্ন ধুইয়া ফেলিয়া সহরের ভিতৱে ●●●