পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাটির সাকী আপনি না খেলে এর কোন উপকার হবে না । আমার অপকার হবে। অম্বলে বুক জ’লে যাচ্ছে। সকলেরি দেখছি সমান অবস্থা। আমারও অম্বল হ’লে বুক জ্বলে যায়। বসিয়া থাকিতে থাকিতে শঙ্কর কুঁজী হইয়া গিয়াছিল, অকস্মাৎ সোজা হইয়া বলিল আপনার অম্বল । হিমানী মান হাসিল, আর কলিক। যে দিন ধরে মনে হয় ব্যথায় বুঝি দম আটকাবে। মাগো, সে যে আমার কি কষ্ট ! শঙ্কর আবার কুঁজা হইয়া গেল-বিশেষভাবে হতাশ হইলেই তার মেরুদণ্ডটা ধনুকের মত বাকিয়া যায় । হিমানী একটু ভাবিয়া বলিল, কিন্তু ওজন্য আমার নালিশ নেই। কলিকের ব্যথা থাকার জন্য আবার নালিশ কি থাকিতে পারে শঙ্কর বুঝিতে পারিল না, বলিল, কেন ? হিমানী নতমুখে অস্বাভাবিক গলায় বলিল, শুনলে আপনি লজ্জা পাবেন, ও যে আমার প্রাপ্য। প্রত্যেকটি মেয়ের জন্য ভগবান নিদিষ্ট ব্যথা মেপে রাখেন, মাথা পেতে নিজের ভাগ নিতেই হবে । ব্যথার এক রূপ এড়িয়ে গেলে অন্যরূপে দেখা দেবেই। কী অদ্ভুত মন্তব্য! সঙ্কোচে নয়, মন্তব্যের ভরে শঙ্কর মাথা হেঁট করিল। কথাগুলি যেন এক বোঝা অভিযোগ-একটি সুদীর্ঘ জীবনের ব্যর্থতার মত অসম্ভব ভারি । কিন্তু শয্যাশায়িনী ওই সংক্ষিপ্ত মানবীটির অভিযোগও তো নিখিল মানবতার ইতিকথায় প্রক্ষিপ্ত নয়! ওর বুকের প্রত্যেকটি দৃশ্যমান পাজরা, ওর কালিপড়া চোখের অত্যধিক স্নেহের কালো ছানি, ওর জীবনযাত্রার অধিকারীর অন্তহীন বঞ্চনার তবে মানে কি ! ভগবানের মাপিয়া-রাখা ব্যথার ভাগের সঙ্গে মানুষের গুজিয়া-দেওয়া ব্যথায় ওর শিরায় রক্তের রঙও বুঝি ফ্যাকাশে হইয়া গিয়াছে। হিমানীর কথাটা সে বুঝিল, না বোঝার মত করিয়া। ও নিত্য অপরান্ত্রে বকুলতলায় স্বামীর সঙ্গে চা পান করিতে পায়। ভোর বেলা মোটাৱে চাপিয়া লোকালয় ছাড়িয়া গিয়া খোলা মাঠের মাঝখানে নির্জন পথপ্ৰান্তে ক্ষণকাল বিশ্রাম bo (