bang labOOOkS. in SGO মানিক রচনাসমগ্র হাঁফ ধরে গিয়েছিল। দৌড়ে বিশেষ লাভ নেই। বরং উচু নিচু মাঠের ভেতর অন্ধকারে আছড় খাওয়ার আশঙ্কা পুরো মাত্রায়। বাধ্য হয়ে দৌড়ানো বন্ধ করে অশোক দ্রুত চলা শুরু করল। আর একবার বিদ্যুৎ চমকাতে অশোক দেখলে আমবাগান তখনও পাঁচ-সাত মিনিটের পথ। আমবাগান ? ঝড় তো ধরে ফেলবে ঠিক, তখন আমবাগানের ভেতর দিয়ে যাওয়াটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? অশোকেব। ইচ্ছা হল একবার থমকে দাঁড়িয়ে কথাটা ভালো করে চিন্তা করে নেয়। কিন্তু পিছনের গর্জনটা খুব কাছে এবং বেশি রকম স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দেখে দাঁড়াবাব সাহস হল না। আর দ্বিতীয পথের সন্ধান তো সে রাখে না! অন্যসময় ঘণ্টাখানেক ধরে খুজে অন্যদিক দিয়ে ঘুরে যাবার ভালো রাস্তা আবিষ্কার করা হয়তো সম্ভব হত, কিন্তু এখন সারারাত ধবে খুজিলেও যে সে পথের খবর মিলবে না তা ঠিক। আমবাগান ছাড়া পথ নেই। কঁচা পাকা ঢের ফল গাছগুলি খাইয়েছে, আজি যদি নিতান্তই চাপা দেয় কী আর করা যাবে! পিছন থেকে মহাকলরব করতে করতে ঝড় এসে অশোককে এমনি জোরে ধাক্কা দিল যে, মুখ থুবড়ে পড়তে পড়তে কোনো রকমে সামলে নিল। আর জোরে চলবার চেষ্টা করবার প্রয়োজন হল না, বাতাসেই অশোককে ঠেলে নিয়ে চলল। ঠিক যেন ভোজবাজি শুরু হয়ে গেল। চিরকাল মাথা উচু করেই আছে, কিন্তু গাছগুলি পর্যন্ত সটান শুয়ে পড়বার জন্য আকুলি-ব্যাকুলি শুরু কবে দিল। লাখখানেক ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রকৃতি যেন বিদঘুটে রকমের ওয়ার-ডান্স আরম্ভ করে দিল, সব ভেঙে চুরমার করে ঠান্ডা হবে। মেঘেব সংযম রইল না, ফোটা ছেড়ে ধারাপাত আরম্ভ হয়ে গেল। সেই পতনশীল বাবিধারা নিয়ে পাগলা হাওয়া এমনি খেলা শুরু করে দিল যে, দেহের অনাবৃত অংশের স্পশেন্দ্ৰিয় দিয়ে এবং বিদ্যুতের আলোতে দর্শনেন্দ্ৰিয় দিয়ে ভালো করে অনুভব করে অশোকের ইচ্ছে হতে লাগল সেই মাঠের ভেতবই মুখ গজে। শুয়ে পড়ে। ঝড়ের শব্দ তো আছেই, তার ওপরে আকাশে মেঘেদের অজস্র চকমকি ঠিকে আলো জ্বালাবার অবিশ্রাম চেষ্টায় ক্ৰমাগত যে আওয়াজ হতে লাগল তাতে অশোকের শ্রবণেন্দ্ৰিয় সংজ্ঞাহারা হয়ে পড়বাব উপক্ৰম করল। আমবাগানের শেষ প্রান্তে হৃদয় মোক্তারের বাড়ি, অশোকের পথ তার রান্নাঘরেব পাশ দিয়ে। চাচের বেড়ার গায়ে বসানো জানালার পাশে আসতেই সুতীক্ষ কণ্ঠ শোনা গেল, অশোকবাবু দাঁড়ান। অশোক থমকে দাঁড়াল। নেকি অশোকের প্রতীক্ষাতেই রান্নাঘরের জানালায় চোখ রেখে দাঁড়িয়েছিল, ডাক দিযেই বাইবে বেরিয়ে অশোকের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। বললে, গলা চিরে ডেকেছি, যে শব্দ! ভাবলাম বুঝি শুনতেই পাবেন না। ঘরে চলুন। না । মা ভাববেন । অশোকেৰ পথ আগলে দাঁড়িযে নেকি বললে, বাগানের ভেতর দিয়ে তো যাওয়া যাবে না, এর ভেতরেই তিন-চাবটা গাছ পড়ে গেছে শব্দ শুনেছি। দাঁড়াবেন না, আসুন। অশোক তবু দ্বিধা করল, কিন্তু মা যে পাগল হয়ে উঠবেন। নেকি ব্যাকুল হয়ে বললে, সে অল্পক্ষণের জন্য, কিন্তু যদি গাছ চাপা পডেন সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাবেন। বলে হাত জোড় করে বললে, অন্য সময় যত পারেন রাগ করবেন, আপনার পায়ে পড়ি, চলুন। আকাশে বিদ্যুৎ চমকে গেল, সেই আলোতে নেকির মুখের যে ব্যাকুল ভাবটা অশোকের চোখে পড়ল তাতে আর দ্বিধা করবার অবকাশ রইল না। বললে, চলুন।