পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in >(?br মানিক রচনাসমগ্ৰ না, ছোটো নয়। নেকি একটা টোক গিলল। আলোটা এমনভাবে ধরলে যে মুখ তার অন্ধকারেই রইল। একটু চুপ করে থেকে বললে, মামা যে জমির কথা বলছিলেন সেটা সত্যি সত্যি আমাদের। আপনার বাবাকে একটু বলবেন ? সম্মুখে সাপ দেখলে মানুষ যেমন চমকে ওঠে অশোক তেমনি চমকে উঠল। অন্য অবস্থায় এ অনুরোধটা অশোকের কাছে এত কদৰ্য ঠেকত না। সরলভাবে নেকি যদি এই অনুরোধ জানােত অশোক মৃদু হেসে তাকে বিচারকের কর্তব্যের কথাটা বুঝিয়ে দিত। নেকির অজ্ঞতায় কৌতুক অনুভব করত। কিন্তু এ যে ষড়যন্ত্র! তাকে ভুলিয়ে আদর দিয়ে, যত্ন দিয়ে, নেমন্তান্ন করে খাইয়ে, শত রকমভাবে ঘনিষ্ঠতার বস্থানে বাঁধবার চেষ্টা করে এমনিভাবে এই নির্জন আমবাগানে এ অনুরোধ করার আর কোনো অর্থই তো হয় না! টাকা নয়, কিন্তু আদর-যত্নও তো ঘুষের বুপ নিতে পারে! হয়তো এই মেয়েটার বৃপা-চক্ৰবতীর নিজের মুখে না জানিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে নির্জনে সুন্দরী তরুণীকে দিয়ে এ অনুরোধ করার আর কী মনে হয়? ঘূণায় অশোকের অন্তর সংকুচিত হয়ে গেল। গভীর কণ্ঠে বললে, তোমার এ অনুরোধের অর্থ জান ? নেকির গলা কেঁপে গেল, আমরা বড়ো গরিব অশোকবাবু। অন্য সময় এই কণ্ঠস্বর শুনলে অশোকের হয়তো করুণা হত, এখন হল রাগ। বললে, গাবিব বলে তোমাদেব জন্য আমাকে অন্যায় করতে হবে নাকি? অন্যায় তো নয়। জমিটা আমাদের। আমার কথা আপনার বিশ্বাস হয় না ? তিক্তস্বরে অশোক বললে, না হয় না। হলেও, জমি তোমাদের কি অন্যের, সে মীমাংসা হবে। আদালতে, সাক্ষী প্রমাণ দিয়ে। তোমার অনুরোধ যে আমাকে আর আমাব বাবাকে কতদূর অপমান করতে পারে সে ধারণা তোমার নেই বলেই নিঃসংকোচে জানাতে পারলে। নেকি কী বলতে গিয়ে সামলে নিল। একটা নিশ্বাস ফেলে বললে-চলুন। নেকির মুখ দেখা গেল না, দেখলে অশোক ভয় পেয়ে যেত। বললে, অতিরিক্ত সাধুতা ফলবেন। না। অশোকবাবু। অহেতুক দংশন। অন্তরে জ্বালা ধরলে, কারণ যাই হােক, এই রকম যুক্তিহীন কথাই মুখ দিযে বাব হয়। অশোক কিন্তু তা বুঝলে না, বললে, সাধুতা-অসাধুতার তফাত বুঝবার ক্ষমতা তোমার নেই, তাই এ কথার জবাব দিলাম না। আমার সব চেয়ে বড়ো দুঃখ লীলা, ভগবানের দেওয়া বুপকে তুমি অন্তরে ওই কথাটাই বড়ো যন্ত্রণা দিচ্ছিল, তীক্ষা কাটার মতো বিধিছিল ; অসতর্ক মুহূর্তে অশোকের শিক্ষা-দীক্ষা মার্জিত বুদ্ধি সকলের বাধা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে এল। এমন বিশ্ৰী শোনাল যে অশোক নিজেই চমকে উঠল। নেকির হাত থেকে আলোটা পড়ে গিয়ে বার কয়েক দপদপ করে জ্বলেই নিভে গেল। পুলক ভয় পেয়ে গিয়েছিল, অশোকের একটা হাত ধরে বললে, বাড়ি চল দাদা। বাড়ি? চল। অশোক মনকে বোঝাল, নতুন একটা অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হল, মন্দ কী। ফুলে যে কীট থাকে সে তত্ত্বটা তো জানাই ছিল! এবার থেকে সাবধান হওয়া যালে। উঃ কীরকম জড়িয়ে বঁধেছিল! মুক্তি পেলাম, বঁচা গেল!