পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Sq, O মানিক রচনাসমগ্ৰ আসিয়া পড়িয়াছিল শ্যামার শিয়রে। জীবনমৃত্যুর কথা শ্যামার তখন মনে পড়ে নাই, ভগবানেব কাণ্ডকারখানা বুঝিতে না পারিয়া সে অবাক হইয়া গিয়াছিল। বুকে তাহার দুদিন দুধ আসিবে না। নবজাত শিশুর জন্য ভগবান দুদিনের উপবাস ব্যবস্থা করিয়াছেন। মন্দার হুকুম স্মরণ করিয়া মাঝে মাঝে ছেলের মুখে সে শুষ্ক স্তন দিয়াছিল। সন্তানের ক্ষুধার আকর্ষণ অনুভব করিয়া ভাবিয়ছিল, হয়তো এ ব্যবস্থা ভগবানের নয়। বুকে তাহাব যথেষ্ট মমতার সঞ্চার হয় নাই, তা হওয়ার আগে দুধ আসিবে না। তবু, কোন মা সন্তানেব জীবনকে অস্থায়ী মনে না করিয়া পারে? বেলা বাডিলে পাড়ার কয়েকবাড়ির মেয়েরা শ্যামার ছেলেকে দেখিতে আসিয়া যখন উচ্ছসিত প্রশংসা করিয়াছিল, শ্যামার তখন যেমন গর্ব হই যাছিল। তেমনি হইয়াছিল। ভয়। ভয় হইয়াছিল। এই জন্য : দেবতাবা গোপনে শোনেন। গোপনে শুনিয়া কোন দেবতার হাসিবার সাধ হয় কে বলিতে পারে? তাই বিনযা প্রকাশের জন্য নয়, দেবতার গোপন কানকে ফাকি দিবার জন্য শ্যামা বলিয়াছিল ; কানা খোঁড়া যে হয়নি মাসিমা তাই ঢের। বলিয়া তাহার এমনই আবেগ আসিয়াছিল যে ঘর খালি হওয়া মাত্র ছেলেকে সে চুম্বনে চুম্বনে আচ্ছন্ন করিয়া দিয়াছিল। ছেলের গলা শুকানোব স্মৃতি মনে পুষিয়া রাখিবার আবেকটি কারণ ঘটিয়াছিল সেদিন রাত্রে, গভীর রাত্রে। সারাদুপুর ঘুমানোর মতো স্বাভাবিক কারণেও নিশীথ জাগরণ মানুষের মনে অস্বাভাবিক উত্তেজনা আনিয়া দেয়। দূরে কোথায় পেটা ঘড়িতে তখন বারোটা বাজিয়াছে। শ্যামাব কল্পনা একটু উদভ্ৰান্ত হইয়া আসিয়াছিল। ঘরের একদিকে বুড়ি দাই অঘোরে ঘুমাইতেছিল। কোণে জ্বলিতেছিল প্ৰদীপ। এগারোটি দিবারাত্রি এই প্ৰদীপ অনির্বাণ জুলিবে, জাতকের এই প্ৰদীপ্ত প্রহরী। শিয়রের কাছে মেঝেতে পডি দিয়া মন্দা দুর্গানাম লিখিয়া বাখিয়াছে। সকালে আঁচল দিযা মুছিযা ফেলিবে, কেহ না মাডাইয়া দেয। সন্ধ্যায় আবার দুর্গানামের রক্ষাকবচ লিখিয়া রাখিবো। আঁতুড়ের রহস্য ভয়ে পরিপূর্ণ, এমনই কত তাহার প্রতিবিধান। হঠাৎ শ্যামার একটা অদ্ভুত অনুভূতি হইয়াছিল। একটা অদৃশ্য জনতা যেন তাহাকে ঘিরিয়া রহিয়াছে। চারিপাশে যেন তাহার অলক্ষ্য উপস্থিতি, অশ্রুত কলরব। সকলেই যেন খুশি, সকলের অনুচ্চাবিত আশীর্বাদে ঘর যেন ভবিয়া গিয়াছিল। শ্যামার বুঝিতে বাকি থাকে নাই এঁরা তাহাব সন্তানেরই পূর্বপুরুষ, ভিড় করিয়া সকলে বংশধরকে দেখিতে আসিয়াছেন। কিন্তু এ কী? বংশধরকে আশীৰ্বাদ করিযা তাহাব দিকে এমন ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে সকলে চাহিতেছেন কেন? ভয়ে শ্যামার নিশ্বাস বন্ধ হইয়া আসিয়াছিল। হাতজোড় করিয়া সে ক্ষমা চাহিয়াছিল। সকলেব কাছে। মিনতি করিয়া বলিয়াছিল, আর কখনও সে মা হয় নাই, সকালে ছেলে যে তাহার গলা শুকাইয়া মরিতে বসিয়াছিল এ অপরাধ যেন তাহারা না নেন, আব্ব কখনও এ রকম হইবে না। জননীর সমস্ত কর্তব্য সে তাড়াতাড়ি শিখিয়া ফেলিবে। তারপর ছেলে মানুষ করার বিপুল কর্তব্য আঁতুড়েই নিখুঁতভাবে শুরু করিয়া দিতে শ্যামার আগ্রহের ছিল না। নিজে সে বড়ো দুর্বল হইয়া পড়িয়াছিল, উঠিয়া বসিতে গেলে মাথা ঘুরিত। শূইয়া কাজল দিলেই শুধু চলিত না, কী কারণে ছেলের চােখে বড়ো পিচুটি র প্রয়োজনকে। ছেলের বুকে একটু সর্দি বসিয়াছিল, ব্যাপারটা সামান্য * * বলিয়া কোহ-তেমন করে নাই, কেবল শ্যামার তাগিদে লন্ঠনের উপর গরম তোলেব বাটি বসাইয়া