পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Rbro মানিক রচনাসমগ্র লজার বশে বিচলিত হয়ে ব্যাপারটাকে এ ভাবে তাল পাকিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেব উপরে সে রেগে উঠেছে। লজা পেয়েও চুপ করে থাকলে অথবা পাকা মেয়ের মতো হাসি-তামাশার একটা অভিনয বজায রাখতে পারলে হেবম্বের কাছ থেকে লজাঁটা লুকানো যেত ভেবে তার আপশোশের সীমা নেই। আঠাবো বছর বয়সে হেরম্বের কাছে আটাশ বছরেব ধীর, সপ্রতিভা ও পূর্ণ পরিণত নারী হতে চেয়ে একেবারে তেবে বছরের মেয়ে হয়ে বসার জন্য নিজেকে আনন্দ কোনো মতেই ক্ষমা করতে পারছে না । আনন্দের অস্বস্তিতে হেরম্ব কিন্তু খুশি হল। আনন্দ রাগ করতে পারে এই ভয়কে জয় করে তার প্রতি নিষ্ঠুর হতে পেরে নিজের কাছেই সে কৃতজ্ঞতা বোধ করেছে। যার সান্নিধ্যই আত্মবিস্মৃতির প্রবল প্রেরণা, তাকে শাসন করা কি সহজ মনের জোরের পরিচয়। হেরম্বের মনে হঠাৎ যেন শক্তি ও তেজের আবির্ভাব ঘটল। কিন্তু সেই সঙ্গে এই জ্ঞানকেও তার আমল দিতে হল যে, আনন্দকে সে আগাগোড়া ভয় করে এসেছে। আনন্দ ইচ্ছা করলেই তার ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে, কোনো এক সময়ে এই আশঙ্কা তার মনে এসেছিল এবং এখনও তা স্থায়ী হয়ে আছে। নিজের এই ভীরুতার জন্ম-ইতিহাস ক্ৰমে ক্ৰমে তার কাছে পরিস্ফুট হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে অনেক দিক থেকে নিজেকে সে আনন্দের কাছে সমৰ্পণ করে দিয়েছে। অনেক বিষয়েই সে আনন্দেব কাছে পরাধীন। দুঃখ না পাবার অনেকখানি স্বাধীনতাই সে স্বেচ্ছায় আনন্দের হাতে তুলে দিয়েছে। তাঁর জীবনে ওর কর্তৃত্ব এখন সামান্য নয়, তার হৃদয়মনের নিয়ন্ত্রণে ওর প্রচুর যথেচ্ছাচার সম্ভব হয়ে গিয়েছে। যতক্ষণ পাবে দেরি করে মালতীকে আসতে হল। তোমাদের দুটিতে দেখছি দিব্যি ভাব হয়ে গেছে। আনন্দ বলল, আমবা বন্ধু, মা। বন্ধ! মালতীর স্বাবে অসন্তোষ প্রকাশ পেল। বন্ধ কি লো স্টুডি। হেরম্ব যে তোব গুরুজন, শ্রদ্ধাব 94 বন্ধু বুঝি অশ্রদ্ধাব পােত্র মা ? মালতী প্ৰদীপ জ্বেলে এনেছিল। মন্দিরেব দরজা খুলে ভিতবে ঢুকে সে আরও একটি বৃহৎ প্ৰদীপ৷ জ্বেলে দিল। হেবঙ্গ উঠে এসে দরজার কাছে দাঁড়াল। মন্দিব প্রশস্ত, মেঝে লাল সিমেন্ট কবা। দেবতা শিশুগোপাল। ছোটাে একটি বেদির উপর বাৎসল্য আকর্ষণের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। মালতী দুটি নৈবেদ্য সাজাচ্ছিল। হেরম্ব দেবতাকে দেখছে, মুখ না ফিরিয়েই এটা সে কী করে টেব পেল বলা 2J3 कीं । কী বকম ঠাকুর, হেৰম্ব ? বেশ, মালতী বউদি। আনন্দ ওঠেনি। সেইখানে তেমনিভাবে বসেছিল। হেরান্স ফিরে গিয়ে তার কাছে বসল। আজ্ঞে না, আমি কার ও দাসী নই। তবে মন্দিরে ঠাকুবের সামনে নাচো যে? ঠাকুরের সামনে বলে নয়। মন্দিরে জায়গা অনেক, মেঝেটাও বেশ মসৃণ। সবদিন মন্দিরে নাচি না। মাঝে মাঝে। আজ এইখানে নাচব, এই ঘাসের জমিটাতে। ঠাকুর আমাদের সৃষ্টি করেছেন, ভক্তের কাছে যা প্ৰণামি পান। তাই দিয়ে ভরণপোষণ করেন। এটা হল উঠার কর্তব্য। কর্তব্য করবার জন্য সামনে নাচব, নাচ আমার অতি সস্তা নয়।