পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8 NING মানিক রচনাসমগ্ৰ পরান কৈফিয়ত দিয়া বলে, অত বেলা থাকতে যাবেন বুঝতে পারিনি। শশী আরও রাগিয়া বলে, বেলা থাকতে যাব না তো কি অন্ধকার হলে যাব ? অন্ধকারে কেউ গলার ঘা দেখতে পায়, না তাতে ওষুধ লাগাতে পারে? আজ কিছু হবে না, কাল সকালে এসো। সকালে পরান আসিল না, বিকালেও নয়। আগের দিন বিকালে নিজের বিচলিত অবস্থা মনে করিয়া শশী একটু ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছিল। মাঝে মাঝে কেন যে তাঁর এ রকম পাগলামি আসে! সামনে যে মানুষ উপস্থিত থাকে তাকেই আঘাত করিতেইচ্ছা হয়, জিনিসপত্র ভাঙিয়া তছনছ করিয়া ফেলিবার সাধ যায়। নিজেকে তখন বড়ো অসুখী মনে হয় শশীর। মনে হয়, অনেক কিছু চাহিয়া কিছুই সে পাইল না। ঘর গোছানোর নামে যেমন ঘরখানা জঞ্জালে ভরিয়াছে, জীবনটা তেমনি বাজে কাজে নষ্ট হইল। কী লাভ হইবে তার হইবে তার গ্রাম ছাড়িয়া গিয়া, চিবকাল যদি সে এমন কিছু চাহিয়া যায় যাহা অবিলম্বে পাওয়া যায় না, যার জন্য অপেক্ষা করিতে করিতে মনের উপভোগ করিবার ক্ষমতা পর্যন্ত ক্ষীণ হইয়া আসে? শশীর সন্দেহ হয়, তার মাথায় বুঝি এক ধরনের গোলমাল আছে। ভবিষ্যতে যারা অন্য রকম ভাবে বঁচিতে চায় বর্তমানকে তারা এ রকম নীরস, নিরর্থক মনে করে না। তার অভাব কীসের দুঃখ কীসেব ? সুস্থ সুন্দব শরীব তাব, অর্থ ও সম্মানের তার অভাব নাই এবং আব কারও না থাক তার জন্য অন্তত একজনের বুক-ভরা স্নেহ। যতদিন এখানে আছে। এ সব তো সে অনায়াসে উপভোগ করিতে পারে, জীবনে বজায় রাখিতে পাবে মৃদু একটু রোমাঞ্চ। পবের বাড়ি থাকার মতো এখানে দিনযাপন করিয়া তার লাভ কী? পরদিন সকালে সে পর্যানের বাড়ি গেল। না, পরান আজও বাড়ি নাই। মোক্ষদা দাওয়ায় বসিয। ছিল, সে বলিল, গলার ঘা দেখাইতে পরান বাজিতপুরে গিয়াছে। গ্রামে বাড়ির কাছে আছে। শশী ডাক্তার, গ্রামে আছে। শশী ডাক্তাবেব হাসপাতাল, গলা দেখাইতে পরান গিয়াছে বাজিতপুর। রাগে শশীর গা জ্বালা করিতে লাগিল। পরান তাকে এমন অপমান করিতে পারে, এ তো সে কল্পনাও করে নাই। একদিন একটু কড়া কথা বলিয়াছে বলিয়া তাকে ডিঙাইয়া বাজিতপুর যাইবে চিকিৎসার জন্য, স্পর্ধা তো কম নয় পরানের ! কুসুম রাঁধিতেছিল, আসিয়া জলচৌকি দিল। শশী বলিল, না, বসব না। মোক্ষদা বলিল, বোসো বাবা বোসো-বাড়ি এসে না বসে কি যেতে আছে? কত বললাম পর্যানকে, কাজে যাচ্ছিাস বাজিতপুব যা, আমাদের শশী থাকতে আর কারোকে গলাটলা দেখাসনি বাপু, শশীর কাছে নাকি সরকারি ডাক্তার! তা ছেলে জবাব যা দিলে! মুখপোড়ার যত ছিষ্টিছাড়া কথা। বললে, ছোটােবাবু ব্যস্ত মানুষ, বিরক্ত হন, তাকে জ্বালাতন করে কী হবে মা ? আগে এ সব কথায় কুসুম মুচকি মুচকি হাসিত। আজ তার মুখে হাসি দেখা গেল না। বলিল, ছোটােবাবুর ওষুধে ঘা বেড়ে গেল কি না, তইতো গেল বাজিতপুর। মোক্ষদা চটিয়া বলিল, তাইতো গেল বাজিতপুর! তোকে বলে গেছে, তাইতো গেল বাজিতপুর! যা মুখে আসবে বানিয়ে বানিয়ে বলবি তুই ? যা না মা রান্নাঘরে ? শশী সত্যসত্যই উদবিগ্নভাবে কুসুমের হাসি দেখিবার প্রতীক্ষা করিতেছিল, এতক্ষণে সে হাসিল। বলিয়া গেল, বানিয়ে কেন বলব মা, তোমার ছেলেই তো আমাকে বলছিল। যা শুনেছি বললাম। মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি লইয়া শশী বাড়ি ফিরিল। কী ভাবিয়াছে পরান ? সেদিন যে ওষুধ দিয়াছিল তাতে পরানের গলার ঘা প্রথমে একটু বাড়িয়া যাওয়া আশ্চর্য নয়, তাতেই কি ভয় পাইয়া গেল পরান, আর তার চিকিৎসায় বিশ্বাস রহিল না ? শশীীর, সেটা ঠিক কিনা জানিতে না পারিয়া তার স্বস্তি ছিল না। হয়তো নয়। হয়তো অবহেলা করিয়া