পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭১

দশম পরিচ্ছেদ।


প্রেম—নানা প্রকার।

 আনন্দাশ্রু-প্লাবিত-বদনা মৃণালিনীকে হেমচন্দ্র হস্ত ধরিয়া উপবন গৃহাভিমুখে লইয়া চলিলেন। হেমচন্দ্র মৃণালিনীকে একবার অপমানিতা, তিরস্কৃতা, ব্যথিতা, করিয়া ত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন আবার আপনিই আসিয়া তাঁহাকে হৃদয়ে গ্রহণ করিলেন,—ইহা দেখিয়া গিরিজায়া বিস্মিত হইল; কিন্তু মৃণালিনী একটি কথাও জিজ্ঞাসা করিলেন না—একটি কথাও কহিলেন না। আনন্দ-পরিপ্লববিবশা হইয়া বসনে অশ্রুস্রুতি আবরিত করিয়া চলিলেন। গিরিজায়াকে ডাকিতে হইল না—সে স্বয়ং অন্তরে থাকিয়া সঙ্গে সঙ্গে চলিল।

 উপবনবাটিকায় মৃণালিনী আসিলে তখন উভয়ে বহুদিনের হৃদয়ের কথা সকল ব্যক্ত করিতে লাগিলেন। তখন হেমচন্দ্র, যে যে ঘটনায় মৃণালিনীর প্রতি তাঁহার চিত্তের বিরাগ হইয়াছিল, আর যে যে কারণে সেই বিরাগের ধ্বংস হইয়াছে তাহা বলিলেন। তখন মৃণালিনী যে প্রকারে হৃষীকেশের গৃহ ত্যাগ করিয়া ছিলেন, যে প্রকারে নবদ্বীপে আসিয়াছিলেন সেই সকল তখন উভয়েই পূর্ব্বোদিত কত হৃদয়ের ভাব পরস্পরের নিকট ব্যক্ত করিতে লাগিলেন। তখন উভয়েই কত ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কল্পনা করিতে লাগিলেন। তখন কতই নূতন নূতন প্রতিজ্ঞায় বদ্ধ হইতে লাগিলেন। তখন উভয়ে নিতান্ত নিষ্প্রয়োজনীয় কত কথাই অতি আবশ্যকীয় কথার ন্যায় আগ্রহ সহকারে ব্যক্ত করিতে লাগিলেন। তখন কতবার

ণ২