পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
মৃণালিনী।

গ্রীবার উপরে মোহিনী কবরী, তাহাতে যূথিকার মালা বেষ্টিত। যৌবন সঞ্চারে শরীরের গঠন সুন্দর হইয়াছিল, যেন কৃষ্ণ প্রস্তরে কোন শিল্পকার পুত্তল খোদিত করিয়াছিল। পরিচ্ছদ অতি সামান্য কিন্তু পরিষ্কার, ধূলি কর্দ্দম পরিপূর্ণ নহে। অঙ্গ একেবারে নিরাভরণ নহে, অথচ অলঙ্কার গুলিন, ভিখারির যোগ্য বটে। প্রকোষ্ঠে পিতলের বলয়; গলায় কাছের মালা’ নাসিকায়, ক্ষুদ্র একটী তিলক, ভ্রূমধ্যে ক্ষুদ্র একটী চন্দনের “টিপ।” সে আজ্ঞামত পূর্ব্ববৎ গায়িতে লাগিল।

“মথুরাবাসিনী, মধুরহাসিনী, শ্যামবিলাসিনী,—রে।[১]
কহলো নাগরি, গেহ পরিহরি, কাহে বিবাসিনী—রে॥
বৃন্দাবনধন, গোপিনীমোহন, কাহে তু তেয়াগী—রে॥
দেশ দেশ পর, সো শ্যামসুন্দর, ফিরে তুয়া লাগি—রে॥
বিকচ নলিনে, যমুনা পুলিনে, বহুতপিয়াসা—রে॥
চন্দ্রমাশালিনী, যা মধুযামিনী, না মিটল আশা—রে॥
সা নিশা সমরি, কহলো সুন্দরি, কাঁহা মিলে দেখা—রে॥
শুনি, যাওয়ে চলি, বাজায়ি মুরলী, বনে বনে একা—রে।”

 গীত সমাপ্ত হইলে মৃণালিনী কহিলেন, “তুমি সুন্দর গাও।” সই মণিমালিনী, ইহাকে কিছু দিলে ভাল হয়। তুমি আজি একটী মুদ্রা আমায় ঋণ দাও; মাধবাচার্য্যের স্বীকৃত অর্থ আসিলে আমি পরিশোধ করিব।”

 মণিমালিনী অর্থ আনিতে গেলেন, ইত্যবসরে মৃণালিনী বালিকাকে নিকটে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন “শুন ভিখারিণি; তোমার নাম কি?”

 ভিখা। “আমার নাম গিরিজায়া।”

 মৃ। “তোমার গৃহ কোথা?”


  1. এই গীত জয়জয়ন্তী রাগিণী ঢিমে তেতালা তাল।