ঊষায় মাহম্কে জননী বলিয়া অভিনন্দন করিয়াছিল। সুতরাং পিতার পরলোকের পর, মাহমের বিয়োগ তাহার কোমলকরুণ চিত্তে কিরূপ গভীর বেদনার সঞ্চার করিয়াছিল, তাহা সহজেই অনুমেয়।
কিছুদিন পরেই গুল্বদন্ ও হিন্দাল্— দুই ভাই ভগিনী, তাহাদের গর্ভধারিণী জননী দিল্দারের আশ্রয়ে গমন করেন। জননী দিল্দার যে উভয়কে পরমস্নেহে বক্ষে তুলিয়া লইয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু গুল্— স্নেহগুণমুগ্ধা কৃতজ্ঞহৃদয়া গুল্—যাহাকে তিনি আট বৎসর পূর্ব্বে শিশু অবস্থায় অঙ্কচ্যুত করিয়াছিলেন, —তাঁহার একান্ত আপনার সেই শিশু গুল্,—আজ কৈশোরের সীমান্তে পদার্পণ করিতে চলিয়াছে। মাহমের সংসারের আদর-যত্ন পাইয়া, তাঁহারই হৃদয়ের স্নেহরস আকর্ষণ করিয়াই কি আজ সে এত বড়টি হয় নাই? তাঁহাদের কথা সে কেমন করিয়া বিস্মৃত হইবে? এখন দিল্দার একাই তাহার জননী নহেন;—জননী তাহার দ্বিধা-বিভক্ত,—এক দিল্দার, অপর মাহম্। মাহমের স্নেহের বেদনাতুর স্মৃতি, আর সেখানে সে যে ভাই হুমায়ূন্কে পাইয়াছে—যাঁহার সঙ্গে তাহার আনন্দের, সহানুভূতির মধুর সম্পর্ক, তাঁহার কথা কত গভীরভাবে গুলের হৃদয়ে মুদ্রিত!
গুলের মনে পড়ে, পিতার মৃত্যুর অনতিপূর্ব্বে ভ্রাতা হুমায়ূন্ যখন দুরারোগ্য কঠিন রোগে শয্যাগত, অসহনীয় যন্ত্রণায় মুহুর্মুহু বিলুপ্তচেতন, সেই নিদারুণ মুহূর্ত্তেও গুল্কে দেখিয়া তিনি কত স্বস্তি অনুভব করিয়াছিলেন; তাহাকে বক্ষদেশে ধারণ করিতে
১৪