পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

 দৃষ্টান্তস্বরূপে বলা যেতে পারে, একজন ইংরাজ ভিক্ষুক এবং একজন ভারতবর্ষীয় ভিক্ষুক ঠিক এক শ্রেণীর নয়। আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তির অগৌরব না থাকাতে যে ব্যক্তি ভিক্ষা অবলম্বন করে তার আত্মসম্মান দূর হয় না। আমাদের দেশে মানুষের দয়া এবং দানের উপর মানুষের অধিকার আছে; দাতা এবং ভিক্ষুক, গৃহস্থ এবং অতিথির মধ্যে একটা সামাজিক সম্বন্ধবন্ধন নির্দিষ্ট আছে। সুতরাং ভিক্ষার মধ্যে সেই হীনতা নেই। আমাদের মহাদেব ভিখারী। ইংলন্‌ডে নিজের ক্ষমতা এবং নিজের পরিশ্রম ছাড়া আর-কিছুর উপরে নির্ভর করা হীনতা, সুতরাং ইংরাজ ‘বেগর’ ঘৃণার পাত্র।

 ভিন্ন জাতিকে বিচার করবার সময় তার সমস্ত অতীত ইতিহাস-পরম্পরা যদি হৃদয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ অনুভব করতে পারি তা হলেই আমরা পরস্পরকে বুঝতে পারি। কিন্তু সে সহৃদয়তা কোথায় পাওয়া যায়!

 ‘মল্টা’ শহরটা দেখে মনে হয় একটা অপরিণত বিকৃত য়ুরােপীয় শহর। পাথরে বাঁধানাে সরু রাস্তা একবার উপরে উঠছে, একবার নীচে নামছে। সমস্তই দুর্গন্ধ, ঘেঁষাঘেষি, অপরিষ্কার। রাত্রে হােটেলে গিয়ে খেলুম। অনেক দাম দেওয়া গেল, কিন্তু খাদ্যদ্রব্য অতি কদর্য। আহারান্তে, শহরের মধ্যে একটি বাঁধানাে চক আছে, সেইখানে ব্যান্‌ড্বাদ্য শুনে রাত দশটার সময় জাহাজে ফিরে আসা গেল। ফেরবার সময় নৌকাওয়ালা আমাদের কাছ থেকে ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে কিছু বেশি আদায়ের চেষ্টায় ছিল। আমার বন্ধু এদের অসৎ ব্যবহারে বিষম রাগান্বিত। তাতে আমার মনে পড়ল এবারে লন্‌ডনে প্রথম যেদিন আমরা দুই ভাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলুম গাড়ােয়ান পাঁচ শিলিং ভাড়ার জায়গায় আমাদের কাছে বারাে শিলিং ঠকিয়ে নিয়েছিল। সে লােকটার

১২২