পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

যাচ্ছে রহস্যের প্রতি মানবমনের অসীম আকর্ষণ— এমন-কি অনেক স্থলে তা জীবনাসক্তিকেও ছাড়িয়ে ওঠে। আমাদের যা প্রকৃত মনুষ্যত্ব তা এই ‘natural selection’ নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত জীবনাসক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ক’রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমরা প্রাণ সমর্পণ করে জ্ঞান পেয়েছি, ধর্ম পেয়েছি, শিল্প রচনা করেছি। সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে ভালােবাসা যে ক্রমে বাড়ছে তা অনেক পরিমাণে তার অকারণদুঃখ-জনক এবং তার জীবনরক্ষার বিরােধী, কিন্তু তবু কোন্ নিয়মানুসারে আমরা উত্তরােত্তর তাকে এত উচ্চ আসন দিচ্ছি?


 পৃথিবীতে কোনো-একটা সীমায় এসে নিশ্চিন্ত হয়ে থেমে থাকবার যাে নেই— তা হলেই আবার হুহু করে পিছিয়ে পড়তে হয়। আপনাকে কোনাে-এক স্থানে বজায় রাখতে হলেও অবিশ্রাম চেষ্টার আবশ্যক। আমরা ভারতবর্ষীয়েরা সেই চেষ্টার বাইরে এসে পড়ে যা পেয়েছিলুম তা উত্তরােত্তর হারাচ্ছি। Australia, apteryx পাখির মতাে আমাদের ডানা ক্রমশই সংকীর্ণ হয়ে এসেছে —কিন্তু এখনকার জীবনসংগ্রামের মধ্যে পড়ে আবার কি সেই ডানা আমরা ফিরে পাব? কিম্বা আত্মরক্ষার উপযােগী আর কোনাে রকম নতুন ইন্দ্রিয় উদ্‌ভূত হবে?


 আমাদের ভারতবর্ষের প্রাচীন বিদ্যা, প্রাচীন সভ্যতা, প্রাচীন প্রাণ, খনির ভিতরকার পাথুরে কয়লার মতো সঞ্চিত হয়ে রয়েছে। তার মধ্যে বহুযুগের উত্তাপ এবং আলােক প্রচ্ছন্ন আছে— কিন্তু আমাদের কাছে তা ঘাের অন্ধকারময়, শীতল, নিবিড়কৃষ্ণবর্ণ অহংকারের স্তূপ। অগ্নিশিখা যদি না থাকে তা হলে গবেষণাদ্বারা

১৯৬