পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

মর্মস্থানটি অধিকার ক’রে সকল-ক’টিকে নিয়ে বেশ সুখে আছেন।

 কিন্তু সম্প্রতি সমাজের নানা বিষয়ে অবস্থান্তর ঘটছে। দেশের আর্থিক অবস্থার এমন পরিবর্তন হয়েছে যে, জীবনযাত্রার প্রণালী স্বতঃই ভিন্ন আকার ধারণ করছে এবং সেই সূত্রে আমাদের একান্নবর্তী পরিবার কালক্রমে কঞ্চিৎ বিশ্লিষ্ট হবার মতাে বােধ হচ্ছে। সেই সঙ্গে ক্রমশঃ আমাদের স্ত্রীলােকদের অবস্থা-পরিবর্তন আবশ্যক এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে। কেবল মাত্র গৃহলুণ্ঠিত কোমল হৃদয়রাশি হয়ে থাকলে চলবে না, মেরুদণ্ডের উপর ভর করে উন্নত উৎসাহী ভাবে স্বামীর পার্শ্বচারিণী হতে হবে।

 অতএব স্ত্রীশিক্ষা প্রচলিত না হলে বর্তমান শিক্ষিতসমাজে স্বামীস্ত্রীর মধ্যে সামঞ্জস্য নষ্ট হয়। আমি স্থানান্তরে অন্য এক প্রবন্ধে বলেছি, আমাদের দেশে বিদেশী শিক্ষা প্রচলিত হওয়াতে, ইংরাজি যে জানে এবং ইংরাজি যে জানে না তাদের মধ্যে একটা জাতিভেদের মতাে দাঁড়াচ্ছে, অতএব অধিকাংশ স্থলেই আমাদের বরকন্যার মধ্যে যথার্থ অসবর্ণ বিবাহ হচ্ছে। এক জনের চিন্তা, চিন্তার ভাষা, বিশ্বাস এবং কাজ, আর-একজনের সঙ্গে বিস্তর বিভিন্ন। এইজন্যে আমাদের আধুনিক দাম্পত্যে অনেক প্রহসন এবং সম্ভবতঃ অনেক ট্র্যাজেডিও ঘটে থাকে। স্বামী যেখানে ঝাঁঝালাে সােডাওয়াটার চায়, স্ত্রী সেখানে সুশীতল ডাবের জল এনে উপস্থিত করে।

 এই জন্যে সমাজে স্ত্রীশিক্ষা ক্রমশই প্রচলিত হচ্ছে। কারও বক্তৃতায় নয়, কর্তব্যজ্ঞানে নয়, আবশ্যকের বশে।

 এখন, অন্তরে বাহিরে এই ইংরাজি শিক্ষা প্রবেশ করে সমাজের অনেক ভাবান্তর উপস্থিত করবেই সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা আশা করেন আমরা এই শিক্ষার প্রভাবে য়ুরােপীয় সভ্যতার মধ্যে প্রাচ্যলীলা সম্বরণ করে পরম পাশ্চাত্যলােক লাভ করব—

৫২