পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 কালু একটু বিরক্ত হয়েই বললে, “উপায় হবে বইকি। বাতিগুলো এক দমকায় নিবত, সেইগুলো একে একে ভদ্ররকম করে নিববে।”

 “বাতি তলার খোপটার মধ্যে এসে জ্বলছে, এখন যে-ফরাস এসে তাকে যে-রকম ফুঁ দিয়েই নেবাক না—তাতে বেশি হা-হুতাশ করবার কিছু নেই। ওই তলানির আলোটার তদ্বির করতে আর ভালো লাগে না, ওর চেয়ে পুরো অন্ধকারে সোয়াস্তি পাওয়া যায়।”

 কালুর বুকে ব্যথা বাজল। সে বুঝলে, এটা অসুস্থ মানুষের কথা, বিপ্রদাস তো এ-রকম হালছাড়া প্রকৃতির লোক নয়; পরিণামটাকে ঠেকাবার জন্যে বিপ্রদাস এতদিন নানারকম প্ল্যান করছিল। তার বিশ্বাস ছিল কাটিয়ে উঠবে। আজ ভাবতেও পারে না—বিশ্বাস করবারও জোর নেই।

 কালু স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে বিপ্রদাসের মুখের দিকে চেয়ে বললে, “তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না ভাই, যা করবার আমিই করব। যাই একবার দালাল-মহলে ঘুরে আসি গে।”

 পরদিন বিপ্রদাদের কাছে এক ইংরেজি চিঠি এল। মধুসূদনের লেখা। ভাষাটা ওকালতি ছাঁদের—হয়তো বা অ্যাটর্নিকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে। নিশ্চিত করে জানতে চায় কুমু ওদের ওখানে ফিরে আসবে কি না, তার পরে যথাকর্ত‌ব্য করা হবে।

 বিপ্রদাস কুমুকে জিজ্ঞাসা করলে, “কুমু, ভালো করে সব ভেবে দেখেছিস?”

 কুমু বললে, “ভাবনা সম্পূর্ণ শেষ করে দিয়েছি, তাই আমার মন আজ খুব নিশ্চিন্ত। ঠিক মনে হচ্ছে, যেমন এখানে ছিলাম তেমনি আছি—মাঝে যা-কিছু ঘটেছে সমস্ত স্বপ্ন।”

২৮৯