“ভেবেই ভাবনা শেষ করতে হয় রে, তাকে ফাঁকি দিয়ে থামাতে গেলে বিপরীত ঘটে। একটু ধৈর্য ধর্, একটা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
বিপ্রদাস সে-মেলে চিঠিতে লিখলে টাকা পাঠাতে হলে কুমুর পণের সম্বলে হাত দিতে হয়; সে অসম্ভব।
যথাসময়ে উত্তর এল। সুবােধ লিখেছে, কুমুর পণের টাকা সে চায় না। সম্পত্তিতে তার নিজের অর্ধ অংশ বিক্রি করে যেন টাকা পাঠানাে হয়। সঙ্গে সঙ্গেই পাওআর অফ অ্যাটর্নি পাঠিয়েছে।
এ-চিঠি বিপ্রদাসের বুকে বাণের মতাে বিঁধল। এতবড়ো নিষ্ঠুর চিঠি সুবােধ লিখল কী করে? তখনই বুড়ো দেওয়ানজিকে ডেকে পাঠালে। জিজ্ঞাসা করলে, “ভূষণ রায়রা করিমহাটি তালুক পত্তনি নিতে চেয়েছিল না? কত পণ দেবে?
দেওয়ান বললে, “বিশ হাজার পর্যন্ত উঠতে পারে।”
“ভূষণ রায়কে তলব দিয়ে পাঠাও। কথাবার্তা কইতে চাই।”
বিপ্রদাস বংশের বড় ছেলে। তার জন্মকালে তার পিতামহ এই তালুক স্বতন্ত্র ভাবে তাকেই দান করেছেন। ভূষণ রায় মস্ত মহাজন, বিশ-পঁচিশ লাখ টাকার তেজারতি। জন্মস্থান করিমহাটিতে। এই জন্যে অনেক দিন থেকে নিজের গ্রাম পত্তনি নেবার চেষ্টা। অর্থসংকটে মাঝে মাঝে বিপ্রদাস রাজি হয় আর কি, কিন্তু প্রজারা কেঁদে পড়ে। বলে, ওকে আমরা কিছুতেই জমিদার বলে মানতে পারব না। তাই প্রস্তাবটা বারে বারে যায় ফেঁসে। এবার বিপ্রদাস মন কঠিন করে বসল। নিশ্চয় জানে সুবােধের টাকার দাবি এইখানেই শেষ হবে না। মনে মনে বললে, আমার তালুকের এই সেলামির টাকা রইল সুবােধের জন্যে, তার পর দেখা যাবে।
দেওয়ান বিপ্রদাসের মুখের উপর জবাব দিতে সাহস করলে না।