পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে २२ ॐ ঝাপসা হয়ে গেছে, কেবল আছে আবেগ আর চল । ওরে নিশাচরী, রাত যখন রাঙা হয়ে পোহাবে, তখন ফেরবার পথের যে চিহ্নও দেখতে পাবি নে । কিন্তু ফিরব কেন, মরব। যে কালো অন্ধকার বাঁশি বাজাল সে যদি আমার সর্বনাশ করে, কিছুই যদি সে আমার বাকি না রাখে তবে আর আমার ভাবনা কিসের ? সব যাবে, অামার কণাও থাকবে না, চিহ্নও থাকবে না, কালোর মধ্যে আমার সব কালো একেবারে মিশিয়ে যাবে, তার পরে কোথায় ভালো কোথায় মন্দ, কোথায় হাসি ८कर्षांध्र कब्र ! সেদিন বাংলাদেশে সময়ের কলে পুরো ইস্ট্রিম দেওয়া হয়েছিল। তাই যা সহজে হবার নয় তা দেখতে দেখতে ধ। ধণ করে হয়ে উঠছিল। বাংলাদেশের যে-কোণে আমরা থাকি, এখানেও কিছুই আর ঠেকিয়ে রাখা যায় না এমনি মনে হতে লাগল। এতদিন আমাদের এদিকে বাংলাদেশের অঙ্গ অংশের চেয়ে বেগ কিছু কম ছিল। তার প্রধান কারণ, আমার স্বামী বাইরের দিক থেকে কারও উপর কোনো চাপ দিতে চান ন। তিনি বলতেন, দেশের নামে ত্যাগ যারা করবে তারা সাধক, কিন্তু দেশের নামে উপদ্রব যারা করবে তারা শত্রু ; তারা স্বাধীনতার গোড়া কেটে স্বাধীনতার আগায় জল দিতে চায় । কিন্তু সন্দ্বীপবাবু যখন এখানে এসে বসলেন র্তার চেলারা চারদিক থেকে আনাগোনা করতে লাগল, মাঝে মাঝে হাটে বাজারে বক্তৃতাও হতে থাকল, তখন এখানেও ঢেউ উঠতে লাগল। একদল স্থানীয় যুবক সন্দীপের সঙ্গে জুটে গেল। তাদের মধ্যে এমন অনেক ছিল যারা গ্রামের কলঙ্ক । উৎসাহের দীপ্তির দ্বারা তারাও ভিতরে বাহিরে উজ্জল হয়ে উঠল । এটা বেশ বোঝা গেল, দেশের হাওয়ার মধ্যে যখন আনন্দ বইতে থাকে তখন মামুষের বিকৃতি আপনি সেরে যায়। মানুষের পক্ষে সুস্থ সরল সবল হওয়া বড়ো কঠিন যখন দেশে আনন্দ না থাকে। এই সময়ে সকলের চোখে পড়ল আমার স্বামীর এলাকা থেকে বিলিতি মুন বিলিতি চিনি বিলিতি কাপড় এখনো নির্বাসিত হয় নি। এমন কি, আমার স্বামীর আমলারা পর্যন্ত এই নিয়ে চঞ্চল এবং লজ্জিত হয়ে উঠতে লাগল। অথচ কিছুদিন পূর্বে আমার স্বামী যখন এখানে স্বদেশী জিনিসের আমদানী করেছিলেন তখন এখানকার ছেলেবুড়ো সকলেই তা নিয়ে মনে মনে এবং প্রকাণ্ডে হাসাহাসি করেছিল। দিশি জিনিসের সঙ্গে যখন আমাদের স্পধর্ণর যোগ ছিল না তখন তাকে আমরা মনে প্রাণে অবজ্ঞা করেছি। এখনো আমার স্বামী তার সেই দিশি ছুরিতে দিশি পেনসিল কাটেন, খাগড়ার কলমে লেখেন, পিতলের ঘটিতে জল খান এবং সন্ধ্যার সময়ে