পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8०९ রবীন্দ্র-রচনাবলী টিকিয়া আছে, সে ষে কেবল নিজের পরিচয় দেয়, তাহা নয়, সে তাহার চারিদিকের পরিচয় দেয়—কারণ সে কেবল নিজের গুণে নহে, চারিদিকের গুণে টিকিয়া থাকে। এখন সাহিত্যের সেই গোড়াকার কথা, সেই দানাবাধার কথাটা ভাবিয়া দেখো । দুই-একটা দৃষ্টান্ত দেখানো যাক। কত নববর্ষার মেঘ, বলাকার শ্রেণী, তপ্ত ধরণীর পরে বারিসেচনের সুগন্ধ, কত পর্বত-অরণ্য নদী-নিঝর নগর-গ্রামের উপর দিয়া ঘনপুঞ্জ গম্ভীর আষাঢ়ের স্কিন্ধসঞ্চার, কবির মনে কতদিন ধরিয়া কত ভাবের ছায়। সৌন্দর্যের পুলক বেদনার আভাস রাখিয়া গেছে। কাহার মনেই বা না রাখে । জগৎ তো দিনরাতই আমাদের মনকে স্পর্শ করিয়া চলিয়াছে, এবং সেই স্পর্শে আমাদের মনের তারে কিছু-না-কিছু ধ্বনি উঠিতেছেই। একদা কালিদাসের মনে সেই তাহার বহুদিনের বহুতর ধ্বনিগুলি একটি স্বত্র অবলম্বন করিবামাত্র একটার পর আর-একটা ভিড় করিয়া সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়া কী সুন্দর দানা বাধিয়া উঠিয়াছে। অনেক দিনের অনেক ভাবের ছবি কালিদাসের মনে এই শুভক্ষণটির জন্য উমেদারি করিয়া বেড়াইয়াছে, আজ তাহারা যক্ষের বিরহ বার্তার ছুতাটুকু লইয়া বর্ণনার স্তরে স্তরে মন্দাক্রাস্তার স্তবকে স্তবকে ঘনাইয়া উঠিল। আজ তাহারা একটির যোগে অন্তটি এবং সমগ্রটির যোগে প্রত্যেকটি রক্ষা পাইয়া গেছে । সতীলক্ষ্মী বলিতে হিন্দুর মনে যে-ভাবটি জাগিয়া ওঠে, সে তো আমরা সকলেই জানি। আমরা নিশ্চয়ই প্রত্যেকেই এমন কোনো-না-কোনো স্ত্রীলোককে দেখিয়াছি, যাহাকে দেখিয়া সতীত্বের মাহাত্ম্য আমাদের মনকে কিছু-না-কিছু স্পর্শ করিয়াছে। গৃহস্থঘরের প্রাত্যহিক কাজকর্মের তুচ্ছতার মধ্যে কল্যাণের সেই যে দিব্যমূর্তি আমরা ক্ষণে ক্ষণে দেখিয়াছি, সেই দেখার স্মৃতি তো মনের মধ্যে কেবল আবছায়ার মতো ভাসিয়াই বেড়াইতেছে। কালিদাস কুমারসম্ভবের গল্পটাকে মাঝখানে ধরিতেই সতী নারীর সম্বন্ধে যে-সকল ভাব হাওয়ায় উড়িয়া বেড়াইতেছিল, তাহারা কেমন এক হইয়া শক্ত হইয়া ধরা দিল ! ঘরে ঘরে নিষ্ঠাবতী স্ত্রীদের যে-সমস্ত কঠোর তপস্তা গৃহকর্মের আড়াল হইতে আভাসে চোখে পড়ে, তাহাই মন্দাকিনীর ধারাধৌত দেবদারুর বনচ্ছায়ায় হিমালয়ের শিলাতলে দেবীর তপস্তার ছবিতে চিরদিনের মতো উজ্জল হইয়া উঠিল। যাহাকে আমরা গীতিবাক্য বলিয়া থাকি অর্থাৎ যাহা একটুখানির মধ্যে একটিমাত্র ভাবের বিকাশ–ওই যেমন বিদ্যাপতির छब्रां बांशग्न बांह छांशब পূক্ত মন্দির মোর,—