পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ বৈশাখ ১৩৩৪ বনবাণী সেদিন বৈশাখমাসী, খণ্ড খণ্ড শস্যক্ষেত্রস্তরে রৌদ্রবর্ণফুল ; মেঘের কোমল ছায়া তারি পরে যেন স্নিগ্ধ আকাশের ক্ষণে ক্ষণে নীচে নেমে এসে ধরণীর কানে কানে প্ৰশংসার বাক্য ভালোবেসে । সেইদিন দেখেছিনু নিবিড় বিস্ময়মুগ্ধ চোখে চঞ্চল নিবািরধারা গুহ হতে বহিরি আলোকে আপনাতে আপনি চকিত, যেন কবি বাল্মীকির উচ্ছসিত অনুষ্টুভ। স্বর্গে যেন সুরসুন্দরীর প্রথম যৌবনোল্লাস, নূপুরের প্রথম ঝংকার, আপনার পরিচয়ে নিঃসীম বিস্ময় আপনার, আপনারি রহস্যের পিছে পিছে উৎসুক চরণে অশ্রান্ত সন্ধান । সেই ছবিখানি রহিল স্মরণে চিরদিন মনোমাঝে । সেদিনের যাত্রাপথ হতে আসিয়াছি বহুদূরে ; আজি ক্লান্ত জীবনের স্রোতে নেমেছে সন্ধ্যার নীরবতা । মনে উঠিতেছে ভাসি শৈলশিখরের দূর নির্মল শুভ্রত রাশি রাশি বিগলিত হয়ে আসে দেবতার আনন্দের মতো প্ৰত্যাশী ধরণী যেথা প্ৰণামে ললাট অবনত । সেই নিরস্তর হাসি অবলীল গতিচ্ছন্দে বাজে কঠিন বাধায় কীৰ্ণ শঙ্কায় সংকুল পথমাঝে দুৰ্গমেরে করি। অবহেলা । সে হাসি দেখেছি বসি পূর্ণবেগে । দেখেছি অম্লান তারে তীব্র রৌদ্রদাহে শুষ্ক শীৰ্ণ দৈন্যদিনে বহি যায় অক্লান্ত প্রবাহে হে হিমাদ্রি, সুগভীর, কঠিন তপস্যা তব গলি ধরিত্রীরে করে দান যে অমৃতবাণীর অঞ্জলি এই সে হাসির মন্ত্র, গতিপথে নিঃশেষ পাথেয়, নিঃসীম সাহসবেগ, উল্লেসিত অশ্রান্ত অজেয় । SSVO)