পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"వెఅ * রবীন্দ্র-রচনাবলী ক্টাচিট কাড়িয়া লইয়া নিজের অবশিষ্ট পশ্চাতের চুল ক্যাচ ক্যাচ শব্দে নির্দয়ভাবে কাটিয়া ফেলিল, তাহার কোকড়া চুলের স্তবকগুলি শাখাছাত কালো আঙুরের স্তুপের মতে গুচ্ছ গুচ্ছ মাটিতে পড়িয়া গেল। উভয়ের মধ্যে এরূপ শাসনপ্রণালী প্রচলিত ছিল । , , অতঃপর এই নীরব পরীক্ষাসভা আর অধিকক্ষণ স্থায়ী হইল না । পিণ্ডাকার কস্তাটি কোনোমতে পুনশ্চ দীর্ঘাকার হইয়া দাসী সহকারে অস্তঃপুরে চলিয়া গেল। অপূর্ব পরম গম্ভীরভাবে বিরল গুম্ফরেখায় তা দিতে দিতে উঠিয়া ঘরের বাহিরে যাইতে উদ্যত হইল। দ্বারের নিকটে গিয়া দেখে, বার্নিশ-করা নূতন জুতাজোড়াটি যেখানে ছিল সেখানে নাই, এবং কোথায় আছে তাহাও বহচেষ্টায় অবধারণ করা গেল না । বাড়ির লোক সকলেই বিষম বিব্রত হইয়া উঠিল এবং অপরাধীর উদ্দেশে গালি ও ভৎসনা অজস্র বর্ষিত হইতে লাগিল। অনেক খোজ করিয়া অবশেষে আনন্তোপায় হইয়া বাড়ির কর্তার পুরাতন ছিন্ন চিলা চটিজোড়াটা পরিয়া প্যান্টলুন চাপকান পাগড়ি সমেত মুসজ্জিত অপূর্ব কর্দমাক্ত গ্রামপথে অত্যন্ত সাবধানে চলিতে লাগিল । পুষ্করিণীর ধারে নির্জন পথপ্রান্তে আবার হঠাৎ সেই উচ্চকণ্ঠের অজস্র হাস্তকলোচ্ছ্বাস যেন তরুপল্লবের মধ্য হইতে কৌতুকপ্রিয়া বনদেবী অপূর্বর ওই অসংগত চটিজুতাজোড়ার দিকে চাহিয়া হঠাৎ আর হাসি ধারণ করিয়া রাখিতে পারিল না । অপূর্ব অপ্রতিভভাবে থমকিয় দাড়াইয়া ইতস্তত নিরীক্ষণ করিতেছে এমন সময় ঘন বন হইতে বাহির হইয়া একটি নির্লজ্জ অপরাধিনী তাহার সম্মুখে নূতন জুতাজোড়াটি রাখিয়াই পলায়নোন্তত হইল। অপূর্ব দ্রুতবেগে দুই হাত ধরিয়া তাহাকে বন্দী করিয়া ফেলিল । o y * মৃন্ময়ী আঁকিয়া বাকিয়া হাত ছাড়াইয়া পলাইবার চেষ্টা করিল, কিন্তু পারিল না। কোকড়া চুলে বেষ্টিত তাহার পরিপুষ্ট সহান্ত দুষ্ট মুখখানির উপরে শাখাস্তরালচু্যত স্বর্ধকিরণ আসিয়া পড়িল। রৌদ্রোজ্জল নির্মল চঞ্চল নিঝরিণীর দিকে অবনত হুইয় কৌতুহলী পৰিক যেমন নিবিষ্টদৃষ্টিতে তাহার তলদেশ দেখিতে থাকে, অপূর্ব তেমনি করিয়া গভীর গভীর নেত্রে মৃন্ময়ীর উর্ধ্বোংক্ষিপ্ত মুখের উপর, তড়িত্তরল দুটি চক্ষুর মধ্যে চাহিয়া দেখিল এবং অত্যন্ত ধীরে ধীরে মুষ্টি শিথিল করিয়া যেন যথাকর্তব্য অসম্পন্ন রাখিয়া বন্দিনীকে ছাড়িয়া দিল। অপূর্ব যদি রাগ করিয়া মৃন্ময়ীকে ধরিয়া মারিত তাহা হইলে সে কিছুই আশ্চর্ধ হইত না, কিন্তু নির্জন পথের মধ্যে এই অপরূপ নীরব শাস্তির সে কোনো অর্থ বুঝিতে পারিল না । - নৃত্যময়ী প্রকৃতির নূপুরনিৰুণের স্তায় চঞ্চল হান্তধ্বনিটি সমস্ত আকাশ ব্যাপিয়া বাজিতে লাগিল এবং চিন্তানিমগ্ন অপূর্বকৃষ্ণ অত্যন্ত ধীরপদক্ষেপে বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল ।